যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ২০১৯ সালে, ট্রাম্প প্রশাসন ৫৯ জন শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানকে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে যে, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তবে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার। তারা এটিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের মতে, শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানরা এখনো দেশটির সবচেয়ে ধনী এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি বর্ণবাদের অবসান হওয়ার পরেও তাদের অর্থনৈতিক প্রভাব কমেনি।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে, আফ্রিকানরা মূলত ডাচ বংশোদ্ভূত, যারা একসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল।
বর্ণবাদের সময়কালে, শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের হাতে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো।
বর্তমানেও, দেশটির অধিকাংশ জমির মালিকানা শ্বেতাঙ্গদের হাতেই রয়েছে। তাদের সম্পদ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর তুলনায় প্রায় ২০ গুণ বেশি।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেছেন, “আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ভুল তথ্য পেয়েছে। তবে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এর আগে, ট্রাম্পের সমালোচনা করায় দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর শরণার্থী নীতি পরিচালক বিল ফ্রিলিক এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “যাদের শরণার্থী শিবিরে থাকতে হয়নি, যারা দেশ ত্যাগ করেননি, বরং একসময় বর্ণবাদের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে, তাদের দ্রুত শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা নজিরবিহীন।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংকট এবং জাতিগত বৈষম্যের ধারণাগুলো নতুন করে সামনে এনেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা