ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ: চীনকে নিয়ে কি অনিশ্চয়তা?

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সাময়িক বিরতি: উদ্বেগের মেঘ কাটেনি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

ওয়াশিংটন থেকে: চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ কিছুটা প্রশমিত করতে উভয় দেশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে। তবে, এই পদক্ষেপের ফলে বিশ্বজুড়ে স্বস্তি মিললেও, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা এখনো কাটেনি। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চীনের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশে আনতে রাজি হয়েছে। চীন সরকারও এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়েছে। উভয় দেশই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ট্রাম্প এই শুল্ক কমানোর পদক্ষেপকে একটি বিজয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শীঘ্রই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন, যাতে বিশ্বের বৃহত্তম এই দুই অর্থনীতির মধ্যে আর্থিক সম্পর্ক বজায় রাখা যায়।

তবে, ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগের সময়ের তুলনায় শুল্ক এখনো অনেক বেশি। শুল্কের হার ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং ভোক্তারা ঝুঁকি নিতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও শুল্ক কমানো হয়েছে, বাণিজ্য যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবগুলো এরই মধ্যে হয়তো তৈরি হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, গত কয়েক মাসে শুল্কের কারণে অনেক কোম্পানি তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এখন আবার শুল্কের হার কমানোর ফলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করতে দ্বিধাগ্রস্ত হবে।

এই পরিস্থিতিতে, উভয় দেশের মধ্যে একটি বাস্তবসম্মত সমঝোতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, চীন চাইছে বেশি পণ্য আমদানি করতে এবং যুক্তরাষ্ট্র চাইছে উৎপাদন বাড়াতে। এই লক্ষ্যগুলো যদি মিলে যায়, তবে তা উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে।

শেয়ার বাজারে এর প্রভাব:।

শুল্ক কমানোর খবরে শেয়ার বাজার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সোমবার এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ৩.৩ শতাংশ বেড়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করে।

তবে, সরবরাহ শৃঙ্খলে দেখা দিতে পারে অস্থিরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক কমানোর ফলে চীনে তৈরি পণ্য দ্রুত মার্কিন বন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে, যার কারণে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়তে পারে এবং বন্দরগুলোতে জটলা তৈরি হতে পারে। একে ‘বুলহুইপ ইফেক্ট’ বলা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা:

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও ৯০ দিনের জন্য শুল্ক কমানো হয়েছে, তবুও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ।

এই পরিস্থিতিতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, ৯০ দিন পর শুল্কের হার বাড়বে নাকি কমবে, তা তারা জানে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শুল্কের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী নিয়োগ এবং তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণে দ্বিধা বোধ করতে পারে। ফলে, অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *