৭০ বছরেও ফুরোয়নি আকর্ষণ! উত্তর ইয়র্কশায়ারের দুঃসাহসিক ওয়াক

ব্রিটিশ ভূখণ্ডের উত্তর ইয়র্কশায়ারের রুক্ষ প্রান্তরে, এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সাক্ষী ছিল কয়েক দশক আগে শুরু হওয়া একটি ঐতিহ্য। প্রায় ৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘লাইক ওয়াক’ নামের এই হাঁটা পথ পাড়ি দেওয়ার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠান।

মূল চ্যালেঞ্জটি ছিল একটানা হেঁটে এই পথ অতিক্রম করা, যা শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক দৃঢ়তার এক কঠিন পরীক্ষা।

১৯৫৫ সালের এক সন্ধ্যায়, ইয়র্ক মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের সদস্যরা ইয়র্কের একটি পাব-এ মিলিত হয়েছিলেন। সম্ভবত তারা ইয়র্কে পাহাড়ের অভাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখনই ক্লাবের চেয়ারম্যান ডেভিড লটন সে মাসের ‘ডেলসম্যান’ ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে হাজির হন।

ম্যাগাজিনটিতে বিল কাওলি নামের এক ব্যক্তির দেওয়া চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জটি ছিল, উত্তর ইয়র্ক মুর-এর দুর্গম পথ চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পাড়ি দিতে পারলে একটি কাপ দেওয়া হবে।

এই চ্যালেঞ্জে রাজি হয়েছিলেন ক্লাবের সদস্যরা। এরপর শুরু হয় প্রস্তুতি। অবশেষে, ১৯৫৫ সালের ১ অক্টোবর, ১০ জন সদস্য এই কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া শুরু করেন।

প্রতিকূল আবহাওয়া এবং দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের যাত্রা সম্পন্ন করেন।

এই দলের একজন ছিলেন মালকম ওয়াকার, যিনি ছিলেন সেই সময়ের এক তরুণ। এই দুঃসাহসিক যাত্রার স্মৃতি আজও অমলিন। সম্প্রতি, মালকম ওয়াকারের ছেলে এবং নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সদস্যরা ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আবার এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেন।

তাদের সঙ্গে ছিলেন লেখকও।

ভোর রাতের অন্ধকারে যাত্রা শুরু হয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল কঠিন পথ পাড়ি দেওয়া। মাঝে মাঝে বৃষ্টি আর কুয়াশার চাদরে মোড়া পথ তাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিল।

যখন তারা ব্ল্যাক মুর-এর কাছে পৌঁছালেন, তখন স্থানীয় একটি পাব-এ বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ হয়। সেখানে আগুনের পাশে বসে তারা শরীর গরম করার চেষ্টা করেন।

পথ চলতে চলতে মালকম ওয়াকারের পরিবারের সদস্যরা তাদের পূর্বপুরুষের এই কীর্তিকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সন্ধ্যায়, যখন তারা চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মালকম ওয়াকার তাদের সঙ্গে যোগ দেন। পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে হেঁটে প্রায় ৬৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন।

অবশেষে, যখন তারা র্যাভেন হলের হোটেলে পৌঁছান, তখন তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের আভা। মালকম ওয়াকার তার পুরনো কাপটি হাতে নিয়ে হাসিমুখে জানান, এই হাঁটা পথের আসল আকর্ষণ হল এর স্মৃতি, যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে।

এই হাঁটা পথ শুধু একটি শারীরিক চ্যালেঞ্জ ছিল না, বরং এটি ছিল একটি পরিবারের একত্রিত হওয়ার এবং তাদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এক অনন্য উপলক্ষ।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *