ট্রাম্পের সিনেমা বাণিজ্যের ‘শত্রুতা’, হলিউডের জন্য দুঃসংবাদ?

শিরোনাম: ট্রাম্পের চলচ্চিত্র শুল্ক প্রস্তাব: বিশ্ব চলচ্চিত্রের জন্য এর অর্থ কী?

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিদেশি চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন। এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিদেশি কর ছাড়ের কারণে মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা নির্মাতাদের অন্য দেশে আকৃষ্ট করছে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে একটি নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের দর্শকদেরও আগ্রহী করে তুলছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে বর্তমানে স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাণের হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এর কারণ হলো অন্যান্য দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের আকর্ষণীয় কর সুবিধা। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সন্দিহান।

চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাভা ডুভার্নে বলেছেন, এই প্রস্তাব ‘অচিন্তিত এবং ব্যবসায়িক ভিত্তিহীন’।

চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকে মনে করেন, শুল্কের পরিবর্তে কর ছাড়ের ব্যবস্থা করা উচিত। অভিনেতা জন ভোইট এবং তাঁর সহযোগীরা হলিউডকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ফেডারেল ট্যাক্স ক্রেডিট-এর প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে প্রযোজকদের জন্য ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ফেডারেল ট্যাক্স ক্রেডিট পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট সিনেটর বেন অ্যালেন বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিস্তারিত এখনো পরিষ্কার নয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এর ফলে বিদেশি চলচ্চিত্র, বিশেষ করে আর্ট ফিল্মগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়তে পারে। তবে, বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যেমন মার্ভেল সিনেমা, যেগুলো সহজেই আমেরিকায় নির্মাণ করা সম্ভব, সেগুলোর ক্ষেত্রে হয়তো এই ধারণা কাজে আসতে পারে।

তবে, এই ধরনের শুল্ক আরোপের ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণের খরচ বাড়তে পারে, যা সিনেমার সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে এবং দর্শকদের জন্য পছন্দের সুযোগও সীমিত করতে পারে। লেখক, প্রযোজক ও পরিচালক জেফ মোস্টের মতে, শুল্ক আরোপের ধারণাটি ‘বিপরীতমুখী’। এর ফলে অন্যান্য দেশও একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ক্ষতি করবে।

অন্যদিকে, অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পের একটি বড় সুবিধা হলো বিশ্বজুড়ে তাদের সিনেমার বাজার রয়েছে, যা তাদের জন্য প্রচুর রাজস্ব তৈরি করে। এই পরিস্থিতিতে, শুল্ক আরোপ করা হলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য লরা ফ্রিডম্যান মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে সিনেমার টিকিট ও স্ট্রিমিং-এর খরচ বাড়তে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্যের ট্যাক্স ক্রেডিট দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প হয়তো ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটারদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখাচ্ছেন এবং হলিউডের সমর্থন পেতে চাইছেন। তবে, তাদের আশঙ্কা, এই ধরনের পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের ক্ষতি করবে।

বর্তমানে, চলচ্চিত্র নির্মাতারা বিদেশি লোকেশনে শুটিং করতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন, কারণ অন্যান্য দেশগুলো আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *