ফিলিপাইনের রাজনীতিতে আবারও ক্ষমতার পালাবদল? দুতার্তে পরিবারের জয়জয়কার, সরার ভবিষ্যৎ কী?
ফিলিপাইনে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া মধ্য-মেয়াদী নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তের পরিবারের সদস্যরা বেশ ভালো ফল করেছেন। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দুতার্তে পরিবারের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীরা হয় এগিয়ে, নয়তো জয়ী হয়েছেন। রড্রিগো দুতার্তে নিজেও তাঁর পুরনো শহর দাভাও সিটির মেয়র পদে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করতে চলেছেন।
অন্যদিকে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতার্তে, যিনি রড্রিগো দুতার্তের কন্যা, তাঁর অপসারণের সম্ভবনা তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনে প্রায় ৬৯ মিলিয়ন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এই নির্বাচনে সিনেটের ২৪টির মধ্যে ১২টি আসনে এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৩১৭টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়রের সমর্থিত প্রার্থীরা সিনেটের ১২টি আসনের মধ্যে ৬টিতে জয়লাভ করতে চলেছেন।
যদিও দুতার্তের সমর্থকরাও ভালো ফল করেছেন, তাঁদের মধ্যে ক্রিস্টোফার “বং” গো সহ আরও কয়েকজন প্রার্থী সিনেটের গুরুত্বপূর্ণ আসনে জয়ী হতে পারেন। উল্লেখ্য, দাভাও সিটির মেয়র পদে রড্রিগো দুতার্তে বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে চলেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তবে, এই নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সারা দুতার্তের ভবিষ্যৎ। তিনি বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন। তবে, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং এর জেরে তাঁর ইমপিচমেন্ট (অপসারণ প্রক্রিয়া) হতে পারে।
যদি সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারাবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই নির্বাচন ফিলিপাইনের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। একদিকে, দুতার্তে পরিবারের ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে, মার্কোস জুনিয়রের প্রভাব বিস্তারের লড়াই—সবকিছুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
এই পরিস্থিতিতে সারা দুতার্তের ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে, তা ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে।
আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হল রড্রিগো দুতার্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। দুতার্তের বিরুদ্ধে মেয়র এবং প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে সংঘটিত হওয়া ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাঁর আমলে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মার্কোস জুনিয়র এবং দুতার্তে পরিবারের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন বেশ কঠিন। একসময় তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করলেও, বর্তমানে তাঁদের মধ্যে নীতিগত বিভেদ দেখা দিয়েছে।
এর মূল কারণ হল, মার্কোস জুনিয়র মাদকবিরোধী অভিযানে দুতার্তের কঠোর নীতির বিরোধিতা করেন। এছাড়াও, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দুতার্তের উপদেষ্টা অ্যাপোলো কুইবোলয়কে গ্রেপ্তার করা হলে, দু’পক্ষের মধ্যেকার সম্পর্ক আরও খারাপ হয়।
রড্রিগো দুতার্তের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে মার্কোস জুনিয়র এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দিতে রাজি হননি। তিনি একে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
সব মিলিয়ে, ফিলিপাইনের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনের ফলাফল, সারা দুতার্তের ভবিষ্যৎ এবং দুতার্তে পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব—এসব কিছুই দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা