শিরোনাম: ইসরায়েলে এফ-৩৫ যন্ত্রাংশ সরবরাহ: যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ মানবাধিকার সংস্থা
যুক্তরাজ্য সরকার ইসরায়েলে এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ রপ্তানি করার সিদ্ধান্তের জন্য এখন আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ফিলিস্তিনি অধিকার সংস্থা আল-হাক এবং গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন) এই মামলার মূল আবেদনকারী। তাদের অভিযোগ, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে এই যন্ত্রাংশ সরবরাহ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
সংস্থা দুটি মনে করে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। বিশেষ করে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে এই ধরনের অস্ত্র সরবরাহ উদ্বেগের কারণ। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইতিমধ্যেই গণহত্যার ঝুঁকির সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের ব্যবহৃত এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমানের প্রায় ১৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে থাকে। যদিও গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির কিছু লাইসেন্স স্থগিত করেছিল, তবে এফ-৩৫ বিমানের যন্ত্রাংশের ক্ষেত্রে সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়নি। সরকার এর কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং এফ-৩৫ প্রোগ্রামের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেছে।
আবেদনকারীদের দাবি, এফ-৩৫ বিমানের যন্ত্রাংশ সরবরাহ অব্যাহত থাকার কারণে যুক্তরাজ্য পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করছে। তাদের মতে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। তারা যুক্তরাজ্যের প্রতি অবিলম্বে ইসরায়েলে সব ধরনের অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য সরকার তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলছে, এফ-৩৫ প্রোগ্রামের গুরুত্বের কারণে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বলেছে, ইসরায়েলকে অন্য কোনো অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ সঠিক নয়। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর জন্য কিছু লাইসেন্স স্থগিত করেছে, যা গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনে সহায়ক হতে পারে।
মামলার শুনানিতে মানবাধিকার সংস্থা অক্সফাম, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল লিখিত প্রমাণ জমা দিয়ে সহায়তা করছে। অক্সফাম গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির চিত্র তুলে ধরেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন পরিচালক যুদ্ধের সময় সরবরাহকারীদের দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ-র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছু দেশ আন্তর্জাতিক আইন মানতে চাইছে না অথবা এফ-৩৫ প্রোগ্রামের কাঠামোর কারণে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের নিয়ম মানা সম্ভব হচ্ছে না।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এখনো চলছে। জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুসারে, গাজায় এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং সেখানকার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর যুদ্ধের প্রভাব এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবের চিত্র তুলে ধরেছে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা