বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীর মেয়ের বিরল রোগ: জীবন বাঁচাতে চাকরি ছাড়লেন বাবা।
ছোট্ট রোজের বয়স যখন নয় বছর, তখন তার জীবনে নেমে আসে এক কঠিন দুর্যোগ। বিরল এক রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে কথা বলার ক্ষমতা হারায় সে।
মেয়ের এই অবস্থা দেখে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী এবং ‘ফ্লাইং কালারস’ ব্যান্ডের প্রধান শিল্পী কেসি ম্যাকফারসন যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিলেন: গানের জগৎ থেকে বিদায় নিয়ে শুরু করলেন এক নতুন সংগ্রাম।
২০১৯ সালে রোজের ‘HNRNPH2-related neurodevelopmental disorder’ নামক রোগটি ধরা পড়ার পর ম্যাকফারসন সম্পূর্ণ বদলে যান।
তিনি জানান, “আগে রোজের সঙ্গে গান গাইতাম, হাসতাম, খেলতাম।
এখন সে চিৎকার করে, কাঁদে, শব্দ করে, কিন্তু কারো সঙ্গে মিশতে পারে না।
কারো সাথে খেলার উপায়ও সে জানে না।”
এই বিরল রোগ রোজের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা কঠিন।
তাদের হাঁটাচলার সমস্যা হয়, অনেক সময় কথা বলতেও অসুবিধা হয়।
ম্যাকফারসন বুঝতে পারেন, মেয়ের সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন দ্রুত এবং উন্নত চিকিৎসা।
তাই তিনি একটি রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে পাওয়া বিশাল সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন।
২০২৩ সালে ম্যাকফারসন ‘আলফারোজ থেরাপিউটিকস’ নামে একটি বায়োটেক কোম্পানি খোলেন।
এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল রোজের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা খুঁজে বের করা।
এরই মধ্যে তিনি এক মিলিয়নের বেশি ডলার সংগ্রহ করেছেন এবং আগামী জুনের মধ্যে আরও পাঁচ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করছেন।
চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি, ম্যাকফারসন এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে, রোজ সম্ভবত আগামী ছয় মাসের মধ্যে তার প্রথম চিকিৎসা শুরু করতে পারবে।
ম্যাকফারসন বলেন, “আমার জন্য এটা কেবল শুরু।
আমি আমার জীবনের বাকি সময়টা এই কাজের জন্য উৎসর্গ করতে চাই।”
শুধু রোজ নয়, বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা এবং তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ম্যাকফারসন কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি, ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘রেয়ার’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়, যেখানে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করা পাঁচটি পরিবারের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
ম্যাকফারসন এই ডকুমেন্টারিটির মাধ্যমে বিরল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে ৭,০০০ এর বেশি বিরল রোগ রয়েছে এবং এর মধ্যে অনেকগুলোর কোনো চিকিৎসা নেই।
এই রোগগুলো সাধারণত জীবন-হুমকি স্বরূপ।
রোজের ক্ষেত্রেও সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ তার শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ আসছে।
যদিও রোজ এখন ১৮ মাস বয়সী একটি শিশুর মতো, তবুও তার বাবা-মা সবসময় তার ভালো থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রোজের মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদ হলেও, রোজের বড় বোন ১১ বছর বয়সী ওয়েস্টন সবসময় ছোট বোনের পাশে থাকে।
ম্যাকফারসন বলেন, “আমার মেয়ে রোজ খুব চেষ্টা করছে।
সে তার জীবন বাঁচানোর জন্য লড়ছে।
তাই, আমি তার জন্য সব ধরনের সুযোগ তৈরি করতে চাই।”
রোজ বর্তমানে একটি বিশেষ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
ম্যাকফারসন বলেন, “পরীক্ষায় হয়তো তার মেধা প্রকাশ পায় না, তবে সে অনেক বুদ্ধিমান।”
মেয়ের এই লড়াইকে সম্মান জানাতে, ম্যাকফারসন ২০২১ সালে ‘টু ক্যুর এ রোজ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা তৈরি করেন।
এরপর তিনি ‘আলফারোজ থেরাপিউটিকস’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানান, কোনো বিরল রোগের চিকিৎসা পাওয়া গেলে তারা খুবই আনন্দিত হন।
কারণ অনেক রোগেরই কোনো কার্যকরী ওষুধ নেই।
ম্যাকফারসনের স্বপ্ন, রোজ এবং তার মতো শিশুরা যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, হাসতে পারে, খেলা করতে পারে এবং একদিন ‘বাবা’ বলে ডাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: পিপল