আর্জেন্টিনার সুপ্রিম কোর্টের একটি বেসমেন্টে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নাৎসি জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ নথি-ভর্তি ৮০টির বেশি বাক্স খুঁজে পাওয়া গেছে। আদালত জানিয়েছে, এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৪১ সালে জার্মান দূতাবাস থেকে জাপানের একটি জাহাজে করে এই নথিগুলো আর্জেন্টিনায় পাঠানো হয়েছিল।
আর্টেরিনাতে আসার পর কাস্টমসের নজরে আসে নথিগুলো। শুরুতে জার্মান কূটনীতিকরা দাবি করেছিলেন, এর মধ্যে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু পরে ‘আর্জেন্টিনা-বিরোধী কার্যকলাপ’-এর অভিযোগে একটি বিশেষ কমিশন এই নথির চালান আটক করে।
এরপর আদালতের নির্দেশে সেগুলো জব্দ করা হয়।
সম্প্রতি আদালত ঘর পরিষ্কার করার সময় এই বাক্সগুলো খুঁজে পায়। একটি বাক্স খোলার পর আদালতের নজরে আসে, এর মধ্যে থাকা কিছু নথিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনায় অ্যাডলফ হিটলারের আদর্শ প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছিল।
এরপর আদালতের নির্দেশে বুয়েনস আইরেসের হলোকস্ট মিউজিয়াম এবং আর্জেন্টিনার ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অন্য বাক্সগুলো খোলা হয়।
আদালতের প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে, পাওয়া যাওয়া সব নথির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো, হলোকস্ট (Holocaust) সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য আছে কিনা, তা খুঁজে বের করা। বিশেষ করে, নাৎসিদের অর্থ কোথায় কিভাবে সরবরাহ করা হতো, সে বিষয়ে কোনো সূত্র পাওয়া যায় কিনা, তা দেখা হচ্ছে।
আদালত জানিয়েছে, নথিগুলো সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বুয়েনস আইরেসের হলোকস্ট মিউজিয়ামকে এই কাজে সহায়তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নথিগুলো থেকে হলোকস্টের অজানা অনেক দিক সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আর্জেন্টিনা প্রথমে নিরপেক্ষ ছিল। তবে ১৯৪৪ সালে তারা জার্মানি ও জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৩৩ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার ইহুদি নাৎসিদের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে আর্জেন্টিনায় আশ্রয় নিয়েছিল।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুয়ান পেরনের সরকার বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নাৎসি কর্মকর্তাকে আশ্রয় দেয়। তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডলফ আইখম্যান, যিনি হিটলারের ‘গণহারে ইহুদি নিধনযজ্ঞের’ মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন।
১৯৬০ সালে বুয়েনস আইরেস থেকে তাকে ধরে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার বিচার হয়।
নাৎসি ডাক্তার জোসেফ মেনগেলে, যিনি আর্জেন্টিনায় আত্মগোপন করেছিলেন, তিনিও পালিয়ে প্যারাগুয়ে ও পরে ব্রাজিলে মারা যান।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা