নতুন জীবন, নতুন পথে: মাদকাসক্তিকে জয় করে শিল্পী প্যাট্রিক ডগার।
এক সময়ের মাদকাসক্ত, যিনি একসময় জীবনের চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলেন, সেই প্যাট্রিক ডগার-এর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প অনুপ্রেরণা জোগায়। কঠিন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে তিনি আজ একজন সফল শিল্পী, যিনি নতুন করে জীবনের সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছেন।
তার জীবন যেন এক চলমান নাটক, যেখানে রয়েছে আনন্দ, বেদনা আর ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
প্যাট্রিক ডগার-এর বেড়ে ওঠা ছিল নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে, যেখানে ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে জীবনযাত্রা আজকের তুলনায় অনেক কঠিন ছিল। দারিদ্র্য, জাতিগত বিভাজন আর সহিংসতার মধ্যে বেড়ে ওঠা ডগার-এর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
অল্প বয়সেই তিনি বাবার মৃত্যুশোক অনুভব করেন, যা তাকে এক গভীর শূন্যতার দিকে ঠেলে দেয়। এই শোক ভুলতেই যেন তিনি মাদক ও মদের প্রতি আকৃষ্ট হন।
এক সময় এমন হয় যে, তিনি দিনের পর দিন নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। কোকেন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
সংগীতের প্রতি ডগার-এর ছিল গভীর আকর্ষণ। তিনি ড্রাম বাজাতে ভালোবাসতেন এবং বিভিন্ন ব্যান্ডে কাজ করেছেন।
১৯৮০-এর দশকে জনপ্রিয় শিল্পী সাডের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ এসেছিল তার কাছে। কিন্তু মাদকাসক্তির কারণে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
এই ঘটনাটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, যা তাকে আরও গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করে।
নেশার কারণে এক সময় তিনি আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। রাস্তায় দিন কাটাতে হতো তাকে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি।
জীবনের এই কঠিন সময়েও তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে, দীর্ঘ ২০ বছর পর, তিনি মাদক থেকে মুক্তি পাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
অ্যালকোহলিকস অ্যানোনিমাস-এর (Alcoholics Anonymous) সাহায্য ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুপ্রেরণায় তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেন।
ডগার-এর জীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয় যখন তিনি শিল্পকলার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে একজন শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
তার চিত্রকর্মে আফ্রিকান-আমেরিকান ইতিহাস ও আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া দেখা যায়। তিনি এখন ব্রুকলিন ও ফ্রান্সের মধ্যে বসবাস করেন এবং একজন সুখী মানুষ হিসেবে জীবন অতিবাহিত করছেন।
প্যাট্রিক ডগার-এর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা সম্ভব। ইচ্ছাশক্তি, সাহসিকতা আর সঠিক পথে পরিচালিত হলে জীবনের কঠিনতম বাধাগুলোও জয় করা যায়।
ডগার-এর গল্প শুধু একজন ব্যক্তির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প নয়, এটি আমাদের সকলের জন্য এক নতুন পথের দিশা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান