সৌদি যুবরাজের সাথে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ: মধ্যপ্রাচ্যে আলোচনার ঝড়!

সৌদি আরবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর: ইরান ইস্যু, তেল এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর চার দিনের মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন সৌদি আরবকে। এই সফরে তাঁর প্রধান আলোচনার বিষয়গুলির মধ্যে ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা, তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা।

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁরা বিমানবন্দরের একটি সজ্জিত কক্ষে যান, যেখানে তাঁদের জন্য ঐতিহ্যবাহী আরবী কফি পরিবেশন করা হয়।

সফরের শুরুতেই রাজকীয় জাঁকজমক দেখা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-কে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে সৌদি রয়্যাল এয়ার ফোর্সের যুদ্ধবিমান। এরপর ট্রাম্প এবং যুবরাজ একটি ভোজসভায় মিলিত হন, যেখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

এই তালিকায় ছিলেন ব্ল্যাকস্টোন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন শোয়ার্জম্যান, ব্ল্যাকরকের প্রধান নির্বাহী ল্যারি ফিঙ্ক এবং টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। মাস্ক বর্তমানে মার্কিন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সৌদি আরবের বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল-ফালিহ্ জানান, “সৌদি এবং আমেরিকানরা যখন একসঙ্গে কাজ করে, তখন প্রায়ই ভালো কিছু হয়, এমনকি দারুণ কিছুও ঘটে।

এই সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তেলের উৎপাদন সংক্রান্ত আলোচনা। সৌদি আরব এবং অন্যান্য ওপেক প্লাস (OPEC+) দেশগুলো ইতোমধ্যেই তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে সহায়তা করেছে।

ট্রাম্প মনে করেন, সস্তা জ্বালানি মার্কিন নাগরিকদের জন্য খরচ কমানো এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। তিনি আরও মনে করেন, তেলের দাম কম থাকলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত একটি সমাধান হতে পারে।

তবে, সৌদি অর্থনীতি এখনো তেলের ওপর নির্ভরশীল। তাদের বাজেট সামঞ্জস্য রাখতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৯৬ থেকে ৯৮ ডলারের মধ্যে থাকতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওপেক প্লাস কতদিন উৎপাদন বাড়িয়ে রাখতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমানে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল প্রায় ৬৪.৭৭ ডলার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের দাম কমে গেলে উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যের কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ট্রাম্পের এই সফরে কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই তিনটি দেশেই ট্রাম্পের পরিবারের ব্যবসা, যেমন – ট্রাম্প অর্গানাইজেশন, বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প তৈরি করছে।

এর মধ্যে জেদ্দায় একটি উঁচু ভবন, দুবাইতে একটি বিলাসবহুল হোটেল এবং কাতারে একটি গলফ কোর্স ও ভিলা কমপ্লেক্স উল্লেখযোগ্য।

এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প দেখাতে চাইছেন যে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাঁর কৌশল ফলপ্রসূ হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা যদিও তাঁর বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন।

এই সফরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জ্বালানি সহযোগিতা এবং সম্ভবত সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির মতো বিষয়গুলোতে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে, মার্কিন প্রশাসন সৌদি আরবের যুদ্ধ বিমানের জন্য প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে।

তবে, ট্রাম্পের এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন তাঁর প্রধান মিত্র ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সফরে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়াটা উল্লেখযোগ্য। সম্ভবত, এই মুহূর্তে উপসাগরীয় দেশগুলো ইসরায়েলের চেয়ে ট্রাম্পের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিলেন। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মরক্কো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়েছিল।

কিন্তু সৌদি আরব স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্যারান্টি, পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে অগ্রগতি চায়।

বর্তমানে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং গাজাকে ধ্বংস করার হুমকির কারণে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা কম।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *