ট্রাম্প: গবেষণায় ২.৭ বিলিয়ন ডলার কর্তন! স্তম্ভিত রিপোর্টে তোলপাড়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণা খাতে অর্থায়ন হ্রাসের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএইচ)-এর গবেষণা খাতে প্রায় ২৭০ কোটি ডলার অর্থ হ্রাস করা হয়েছে।

সিনেটের একটি সংখ্যালঘু কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। খবরটি প্রকাশ করেছে সিএনএন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ বিজ্ঞানচর্চার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। এর ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে নতুন আবিষ্কারের পথ রুদ্ধ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায়ও দেখা দিতে পারে দুর্বলতা।

সেই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিনেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম ও পেনশন বিষয়ক কমিটির সংখ্যালঘু কর্মীদের তৈরি করা এই প্রতিবেদনটি সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এনআইএইচ-এর গবেষণা খাতে প্রায় ২৭০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ হ্রাস করা হয়েছে।

আগে ধারণা করা হয়েছিল, গবেষণা প্রকল্প বাতিল করার কারণে এনআইএইচ-এর প্রায় ১৮০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। নতুন এই হিসাব সেই ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে ‘বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরির জন্য এনআইএইচ-এর অনুদান বিষয়ক তথ্য, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের স্ব-প্রতিবেদিত স্প্রেডশিট এবং অন্যান্য সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

কমিটির পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, গবেষণা খাতে অর্থ হ্রাসের কারণে ক্যান্সার, আলঝেইমার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং সংক্রামক রোগ নিয়ে নতুন আবিষ্কার কমে যাবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুর্বল হয়ে পড়বে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

কমিটি এই প্রতিবেদন প্রকাশের ঠিক আগে স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের সঙ্গে একটি শুনানির আয়োজন করতে যাচ্ছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত ২০২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু ক্যান্সার গবেষণা নয়, আলঝেইমার রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং সংক্রামক রোগ বিষয়ক গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা অর্থও বাতিল করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংক্রামক রোগ, মানসিক স্বাস্থ্য, স্নায়ু বিজ্ঞান, বার্ধক্য, মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণা খাতে প্রায় ৭০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বাতিল করা হয়েছে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের পুনর্গঠন এবং তহবিল পর্যালোচনা করার কারণেই কিছু গবেষণা প্রকল্পের কাজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরাসরি প্রভাব ফেলে এমন গবেষণাগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

কমিটির প্রতিবেদনে কর্মীদের ছাঁটাই এবং সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বৈজ্ঞানিক তথ্য সরিয়ে ফেলার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমপক্ষে ১,৭৫টি সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য এবং স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের একটি কেন্দ্রীয় ডাটা পোর্টাল থেকে ১৩৫টি তথ্যভাণ্ডার সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের বিভাগকে শক্তিশালী করতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমকে আরও গুরুত্ব দিতে চায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *