যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য ‘রিয়েল আইডি’: বাংলাদেশী অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের জন্য জরুরি কিছু তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? অথবা সেখানে বসবাস করেন? তাহলে ‘রিয়েল আইডি’ সম্পর্কে আপনার জানা অত্যন্ত জরুরি। ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ২০০৫ সালে এই আইনটি পাস হয়।
এই আইনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে উঠতে এবং ফেডারেল সুবিধাগুলোতে প্রবেশ করতে একটি বিশেষ আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি, এই নিয়ম আরও কঠোর করা হয়েছে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ‘রিয়েল আইডি’ কী, কাদের এটি প্রয়োজন এবং এটি কিভাবে বাংলাদেশী অভিবাসী ও ভ্রমণকারীদের প্রভাবিত করতে পারে।
‘রিয়েল আইডি’ আসলে কী?
‘রিয়েল আইডি’ হলো ফেডারেল সরকারের দেওয়া একটি আইডি কার্ড, যা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাইভার লাইসেন্স এবং অন্যান্য রাজ্য-কর্তৃক ইস্যু করা আইডি কার্ডের মান উন্নয়ন করে। এই কার্ডে একটি কালো বা সোনালী তারা (*) অথবা যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা থাকতে হবে, যা প্রমাণ করে যে এটি ফেডারেল স্ট্যান্ডার্ড পূরণ করে।
যাদের এই চিহ্ন নেই, তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে উঠতে বা ফেডারেল অফিসে প্রবেশ করতে সমস্যা হতে পারে। ৭ই মের পর থেকে, ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল মার্কিন নাগরিকের জন্য এই ধরনের আইডি কার্ড থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কাদের ‘রিয়েল আইডি’ দরকার?
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে অথবা সেখানকার ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করতে হলে, আপনার ‘রিয়েল আইডি’ থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোতে ওঠা, ফেডারেল আদালত এবং সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশ করা ইত্যাদি।
যাদের কাছে এই কার্ড নেই, তাদের বিকল্প পরিচয়পত্র দেখাতে হতে পারে।
বিদেশী নাগরিকদের জন্য পরিচয়পত্র
যদি আপনার কাছে গ্রিন কার্ড, ভিসা অথবা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র থাকে, তাহলে আপনি কিছু অতিরিক্ত ডকুমেন্ট দেখিয়েও এই সুবিধাগুলো পেতে পারেন। নিচে কিছু বিকল্প আইডি-র তালিকা দেওয়া হলো:
- বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা
- গ্রিন কার্ড (স্থায়ী বসবাসের অনুমতি)
- ওয়ার্ক পারমিট বা ইমিগ্রেশন বিষয়ক অন্যান্য নথি
তবে মনে রাখতে হবে, টিএসএ (TSA) বা পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসন-এর নিয়মকানুন যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভ্রমণের আগে সর্বশেষ আপডেটের জন্য তাদের ওয়েবসাইট দেখে নেওয়া ভালো।
গ্রিন কার্ড ও ভিসাধারীদের জন্য বিশেষ কিছু বিষয়
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী গ্রিন কার্ডধারী এবং ভিসাধারীদের জন্য ‘রিয়েল আইডি’ সংক্রান্ত কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে।
- যাদের গ্রিন কার্ড আছে, তাদের ড্রাইভার্স লাইসেন্স রিনিউ করার সময় ‘রিয়েল আইডি’ জমা দিতে হবে।
- ছাত্র এবং কর্মচারী ভিসাধারীরা তাদের পাসপোর্ট, ভিসা এবং আই-94 ফর্ম দেখিয়ে ‘রিয়েল আইডি’ পেতে পারেন।
ভিসা বা গ্রিন কার্ড না থাকলে?
যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের জন্য কিছু রাজ্যে নন-কমপ্লায়েন্ট আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়। তবে এই কার্ডগুলো অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করা যায় না।
এছাড়া, ‘রিয়েল আইডি’ থাকলেই যে আপনি সব সময় নিরাপদ থাকবেন, তা নয়। ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) আপনার অভিবাসন বিষয়ক কার্যক্রম তদন্ত করতে পারে। তাই, যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনার বর্তমান ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস প্রমাণ করে এমন বৈধ কাগজপত্র সঙ্গে রাখা জরুরি।
সতর্কতা
‘রিয়েল আইডি’র নিয়মাবলী নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা যায়। বিশেষ করে, অভিবাসীদের মধ্যে এই বিষয়ে ভীতি কাজ করে। তাই, ভ্রমণের আগে অথবা কোনো সরকারি অফিসের সাথে যোগাযোগের আগে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের আগে অথবা সেখানে বসবাস করলে ‘রিয়েল আইডি’র নিয়মকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া অপরিহার্য। এই বিষয়ে সচেতন থাকলে আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন এবং আপনার ভ্রমণ আরও সহজ হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা