যুদ্ধ-আতঙ্কে কাশ্মীর: সীমান্ত বিভেদেও মানুষের কান্না!

কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি: সীমান্তের দু’পাশে আতঙ্কিত মানুষ, অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি।

জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের জেরে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। সীমান্তের দুই পাশে বসবাসকারী কাশ্মীরিরা এখনো পর্যন্ত চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

একদিকে যেমন ঘর-বাড়ি ছাড়তে হয়েছে, তেমনই অনিশ্চয়তা তাড়া করছে তাদের।

গত কয়েক দিন ধরে চলা গোলাগুলিতে বহু মানুষের জীবনহানি ঘটেছে। উভয় দেশই হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেছে, তবে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ।

সীমান্তের কাছে বসবাসকারী মহম্মদ ইকবাল নামের এক ব্যক্তি জানান, গোলাগুলির সময় তিনি কারখানায় কাজ করছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে ফোন করে জানান, তাদের বাড়ির কাছে শেল এসে পড়েছে।

এরপর তারা সবাই মিলে বাড়ির নিচতলার একটি ঘরে আশ্রয় নেয়।

ইকবালের পরিবারের মতো, সীমান্তের কাছাকাছি বসবাস করা বহু মানুষের জীবন এখন ঝুঁকির মুখে। যুদ্ধের কারণে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়েছে।

অনেকে ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

কাশ্মীর এমন একটি অঞ্চল, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর থেকেই এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশ একাধিকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।

যদিও উভয় দেশই কাশ্মীরকে তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করে।

পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে সামান্য দূরে বসবাসকারী সাইমা আশরাফ জানান, যুদ্ধবিরতি হলেও এখানকার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

মানুষের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে। কখন যে আবার পরিস্থিতি খারাপ হবে, সেই দুশ্চিন্তা তাদের তাড়া করছে।

অনেকে এখনও পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেনি।

পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকার এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আখতার আইয়ুব জানান, সেখানকার অনেক মানুষ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, যাতে তারা নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারেন।

অন্যদিকে, ভারতীয় অংশে বসবাসকারী আমির চৌধুরী নামের এক যুবক জানান, যুদ্ধবিরতি হওয়ায় সেখানকার বাজারগুলো ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে।

তবে রাতের বেলা কী হবে, সেই চিন্তা এখনো তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হওয়া জরুরি। কারণ, দুই দেশই পারমাণবিক শক্তিধর এবং সামান্য ভুলের কারণে এখানে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে উভয় দেশকে আরও বেশি মানবিক হতে হবে এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

দুই দেশের সরকারকেই আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে, যাতে কাশ্মীরিরা একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *