নিউজিল্যান্ডের একটি বিশেষ ফলের গল্প, যা তাদের “আনঅফিসিয়াল জাতীয় ফল” হিসেবে পরিচিত— কিউয়ি ফল নয়, বরং ফেইজোয়া। দক্ষিণ আমেরিকার এই ফলটি এখন নিউজিল্যান্ডের মানুষের কাছে ভালোবাসার প্রতীক।
চমৎকার স্বাদের এই ফলটির বিশেষত্ব হলো এটি বিনামূল্যে বিতরণের সংস্কৃতি।
ফেইজোয়া, যা অন্য জায়গায় আনারস পেয়ারা নামেও পরিচিত, মূলত দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। ফলটি দেখতে ডিম্বাকৃতির, সবুজ এবং সুগন্ধি।
যদিও ক্যালিফোর্নিয়া বা ক্যানবেরার মতো জায়গাগুলোতেও এই ফলটি পাওয়া যায়, তবে নিউজিল্যান্ডের মানুষের মতো এত আগ্রহ আর কোথাও দেখা যায় না। নিউজিল্যান্ডে ফলটি খুব অল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায়, বিশেষ করে যখন এটি পাকা শুরু করে।
নিউজিল্যান্ড একটি ফল রপ্তানিকারক দেশ, কিন্তু ফেইজোয়াকে তারা বাণিজ্যিকীকরণ করতে পারেনি, যেমনটা তারা আপেল বা কিউয়ির ক্ষেত্রে করেছে। এর প্রধান কারণ হলো ফলটির স্বল্প শেলফ লাইফ।
এই কারণে, নিউজিল্যান্ডে যখন ফেইজোয়ার মৌসুম আসে, তখন যেন এক উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
এই ফলের জনপ্রিয়তার পেছনে একটি বড় কারণ হলো এটি পাওয়ার প্রক্রিয়া। শরৎকালে যখন ফলের গাছ থেকে ফেইজোয়া ঝরে পড়ে, তখন তা বাড়ির উঠোনে নরম কার্পেটের মতো জমা হয়।
এরপর এগুলো বাক্স, ব্যাগ বা বালতিতে ভরে বাড়ির বাইরে, অফিসের ব্রেক রুমে অথবা পাড়ার ফেসবুক গ্রুপে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
এই ফল এত বেশি পাওয়া যায় যে, অনেক ফেইজোয়া প্রেমী আছেন যারা কখনোই এটি কিনে খান না।
ওয়েলিংটনের ডায়ানা ওয়ার্ড-পিকারিং তার বাড়ির পেছনের পাঁচটি গাছ থেকে এই মৌসুমে কয়েক হাজার ফেইজোয়া বিতরণ করেছেন। তিনি জানান, তিনি তার প্রতিবেশী, সহকর্মী, এমনকি মেয়ের আইল্যাশ টেকনিশিয়ানকেও এই ফল দিয়েছেন।
তার মতে, যারা ফল কিনতে পারে না, তাদের মধ্যে এটি বিনামূল্যে বিতরণ করাটা আনন্দের।
তবে, সবার যে এই ফলটি খুব প্রিয়, তা নয়। অনেকের কাছে এর স্বাদ একটু অন্যরকম লাগে।
কারো কাছে এটি তেতো, কারো কাছে সাবানের মতো। ডায়ানার মেয়ে, যিনি একবার ফলটি খেয়েছিলেন, তার মতে, এটি “নাক-সর্দির মতো”।
অন্যদিকে, যারা নিউজিল্যান্ডের বাইরে থাকেন, তাদের কাছে ফেইজোয়া একটি নস্টালজিক স্মৃতি। প্রবাসী নিউজিল্যান্ডবাসীরা প্রায়ই অনলাইনে জানতে চান, কোথায় ফেইজোয়া পাওয়া যাবে?
এই ফলটি কীভাবে ব্রাজিল, উরুগুয়ে এবং আর্জেন্টিনার কিছু অঞ্চল থেকে নিউজিল্যান্ডে এল, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায় না।
তবে ধারণা করা হয়, একশ বছরের কিছু বেশি সময় আগে, অস্ট্রেলিয়ার মাধ্যমে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এটি এখানে আসে। নিউজিল্যান্ডের মাটি, উপক্রান্তীয় জলবায়ু এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় কম থাকার কারণে এখানে ফেইজোয়ার গাছ খুব ভালোভাবে জন্মায়।
নিউজিল্যান্ডে প্রায় একশ জনের মতো বাণিজ্যিক ফেইজোয়া চাষী রয়েছেন, এবং তারা মূলত অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য এই ফল সরবরাহ করেন।
ফেইজোয়া থেকে জুস, সাইডার এবং কম্বুচা-র মতো জনপ্রিয় পানীয়ও তৈরি করা হয়। বর্তমানে, বাজারে এক কেজি ফেইজোয়ার দাম প্রায় ৯ থেকে ১০ নিউজিল্যান্ড ডলার (প্রায় ৬০০ টাকার মতো)।
তবে, নিউজিল্যান্ডের ফেইজোয়া গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ব্রেন্ট ফুলার জানান, ফলটি রপ্তানি করা কঠিন, কারণ এটি দুই থেকে তিন সপ্তাহের বেশি সংরক্ষণ করা যায় না।
এই কারণে, এটি এখনও নিউজিল্যান্ডের শরৎকালের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ফেইজোয়া নিউজিল্যান্ডের মানুষের মধ্যে একটি বন্ধন তৈরি করে, যা তাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
কিউয়ি ফল নিউজিল্যান্ডের জন্য লাভজনক একটি পণ্য হতে পারে, কিন্তু ফেইজোয়ার প্রতি তাদের ভালোবাসা যেন একটু বেশি।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস