যুদ্ধদিনের স্মৃতি: বিশ্বযুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের ছবি ও মানসিক আঘাত
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, লী মিলার। সম্প্রতি তাঁর তোলা কিছু দুর্লভ ছবি নিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ফটো লন্ডন’ প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে জানা যাচ্ছে, যুদ্ধের বিভীষিকা তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ফ্রান্সে মিত্রশক্তির আগমন থেকে শুরু করে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ—সবকিছুই ক্যামেরাবন্দী করেছেন মিলার।
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ছবিগুলোতে একদিকে যেমন দেখা যায় সেন্ট-মালো শহরে বোমাবর্ষণের চিত্র, তেমনি রয়েছে মার্কিন সেনাদের বিজয়োল্লাসের ছবি। তবে যুদ্ধের ভয়াবহতা মিলারের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল।
যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে ফিরে আসার পর তিনি মানসিক অবসাদে ভুগতেন। বিষয়টি নিয়ে লী মিলার আর্কাইভের একজন কর্মকর্তা বলেন, “যুদ্ধ তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। যুদ্ধের ভয়াবহতা তিনি যেন ভুলতে চেয়েছিলেন।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ভোগা কষ্টের স্মৃতিগুলো মিলার যেন একপ্রকার ‘গোপন’ করে রেখেছিলেন। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে ফিরে আসার পর তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভুগেছিলেন। এমনকি বিবাহিত জীবনেও তিনি এই আঘাতের কথা সেভাবে প্রকাশ করেননি।
এই প্রদর্শনীতে মিলারের তোলা ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৪৪ সালে নরম্যান্ডিতে ৪৪তম ইভাকুয়েশন হাসপাতালের বাইরের একটি জিপের ছবি। এছাড়া, ১৯৪৫ সালে জার্মানির বার্চটেসগাডেন-এর একটি হোটেলের বারান্দায় মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের ছবিও রয়েছে।
ছবিতে দেখা যায়, তাদের পেছনে পাহাড়ের উপরে তখনো হিটলারের বাঙ্কার জ্বলছে।
যুদ্ধকালীন সময়ে লী মিলারের কাজ সবসময় সহজ ছিল না। একজন নারী হিসেবে মার্কিন সেনাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাঁকে অনেক সময় প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়েছে। এমনকি সেন্ট-মালোর মুক্তির পর ছবি তোলার কারণে তাঁকে গৃহবন্দীও করা হয়েছিল।
প্রদর্শনীতে শুধু লী মিলারের কাজই নয়, একইসঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়েও আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে। এই প্রদর্শনীতে সমকামীদের প্রতি রাশিয়ার আগ্রাসনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
সাধারণত যুদ্ধের ছবিগুলো ফ্রন্টলাইন বা ধ্বংসস্তূপের মাঝে তোলা হয়। কিন্তু এখানে যুদ্ধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবন ও তাদের অনুভূতির প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে।
ফটো লন্ডন প্রদর্শনী ১৪ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত লন্ডনের সোমারসেট হাউসে অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian