রান্নাঘরের জিনিসপত্র: ভালোবাসা, বিচ্ছেদ, আর স্মৃতির গল্প।
বিখ্যাত খাদ্য লেখক বী উইলসন তাঁর নতুন বই “দ্য হার্ট-শেপড টিন: লাভ, লস অ্যান্ড কিচেন অবজেক্টস”-এ আমাদের রান্নাঘরের অতি সাধারণ জিনিসপত্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগ আর স্মৃতির এক অসাধারণ জগৎ উন্মোচন করেছেন। বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন কীভাবে একটি হার্ট-আকৃতির টিন, একটি প্রেশার কুকার অথবা একজোড়া বাটি- এই সবকিছুই আমাদের জীবনের গল্প বলতে পারে।
বইটির শুরুটা হয় উইলসনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে। ২০২০ সালে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, তিনি তাঁর রান্নাঘরে খুঁজে পান সেই পুরোনো, মরচে পড়া হার্ট-আকৃতির টিনটি, যা দিয়ে তিনি একসময় নিজের বিয়ের কেক তৈরি করেছিলেন। এই টিনটি যেন তাঁর অতীতের অনেক স্মৃতিকে চোখের সামনে এনে দেয়। তাঁর মনে হয়, এই টিনটি সম্ভবত তাঁর বিবাহবার্ষিকীর কেক বানানোর জন্য তুলে রাখা হয়েছিল।
উইলসন শুধু নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তিনি আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা রান্নার সরঞ্জামগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দিকটিও তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি থালা-বাসন আমাদের ভালোলাগার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, আবার কোনোটি হয়তো প্রিয়জনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তাঁর মতে, রান্নাঘরের প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব একটা ভাষা আছে, যা আমাদের আবেগ আর অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিশে থাকে।
বইটিতে, তিনি বিভিন্ন মানুষের রান্নাঘরের গল্প তুলে ধরেছেন। কারো কাছে একটি প্রেশার কুকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে, আবার কারো কাছে একটি রূপোর টোস্ট র্যাক প্রিয়জনের স্মৃতিচিহ্ন। ভেনেজুয়েলার একজন নারীর গল্প পাওয়া যায়, যিনি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিবাদে প্রতি রাতে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাঁড়ি-পাতিল বাজাতেন। আইসল্যান্ডের মানুষজনও তাঁদের দেশের অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, সঙ্গে ছিল তাঁদের রান্নার সরঞ্জাম।
উইলসন তাঁর নিজের পরিবারের সঙ্গে রান্নাঘরের জিনিসপত্রের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন। তাঁর দাদা একসময় ওয়েজউড কোম্পানির পরিচালক ছিলেন, এবং তাঁর তৈরি করা অনেক ডিনার সেট এখনো পরিবারের সদস্যদের কাছে স্মৃতিচিহ্ন হয়ে আছে। তবে উইলসন স্বীকার করেন, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিছু বাসনপত্রের প্রতি তাঁর দ্বিধা রয়েছে।
বী উইলসনের এই বইটি শুধু রান্নার জিনিসের গল্প নয়, বরং এটি আমাদের সম্পর্কের, স্মৃতির এবং ভালোবাসার গল্প। এটি আমাদের শেখায়, কীভাবে আমাদের চারপাশের সামান্য জিনিসগুলোও আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে পারে। বইটির মাধ্যমে, লেখক আমাদের রান্নাঘরের জিনিসপত্রের প্রতি নতুন করে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করেন, যা আমাদের জীবনের গল্পগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান