সৌদি আরবে বিশ্বকাপ: শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিস্ফোরক অভিযোগ!

সৌদি আরবে নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। দেশটিতে ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যেই শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের জীবনহানির ঘটনা ঘটছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch) এবং ফেয়ার স্কয়ার (FairSquare) নামক দুটি মানবাধিকার সংস্থা তাদের পৃথক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শ্রমিকদের মৃত্যুগুলো মূলত কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা, অসুস্থতা এবং যথাযথ সুরক্ষার অভাবে ঘটছে।

প্রতিবেদনগুলোতে সৌদি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার এবং তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এর ফলে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কেও জানতে পারছে না।

জানা গেছে, নিহত শ্রমিকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক।

সংস্থাগুলো বলছে, সৌদি আরব বর্তমানে কয়েকশো বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো এবং উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ভবিষ্যৎ শহর ‘নিওম’ অন্যতম। এই প্রকল্পগুলোর কারণে আগামী বছরগুলোতে আরও হাজারো শ্রমিকের জীবনহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি এক বাংলাদেশি শ্রমিক বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। কিন্তু তার পরিবারের অভিযোগ, মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করা হয় এবং ক্ষতিপূরণ পেতে হলে স্থানীয়ভাবে দাফন করার শর্ত দেওয়া হয়।

এছাড়া, অনেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য ১৫ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক মিংকি ওয়ার্ডেন এক বিবৃতিতে ফিফা’র প্রতি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “সৌদি কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ফিফাকেও শ্রমিকদের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

ফেয়ার স্কয়ারের তদন্তে গত ১৮ মাসে সৌদি আরবে কর্মরত ১৭ জন নেপালী শ্রমিকের মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে বিদেশি শ্রমিকদের ‘হাজারো’ মৃত্যুরহস্য উন্মোচিত হবে না।

ফেয়ার স্কয়ারের পরিচালক জেমস লিঞ্চ জানান, অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারকে ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ প্রকল্পের অধীনে দেশটির অর্থনীতিকে তেলের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনতে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের মজুরি ও অধিকার হরণের অভিযোগ করে আসছে।

ফিফা এক চিঠিতে জানিয়েছে, তারা শ্রমিক কল্যাণ ব্যবস্থা চালু করতে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, অধিকারকর্মীরা বলছেন, কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের সময় শ্রমিকদের জন্য কিছু সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও, সৌদি আরবে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

মিংকি ওয়ার্ডেন আরও বলেন, কাতারে সুপ্রিম কমিটি নামে একটি তদারকি বোর্ড ছিল, যা ফিফা নির্মাণ সাইটগুলো পর্যবেক্ষণ করত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখত। কিন্তু সৌদি আরবে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

তিনি যোগ করেন, “কাতারে জীবন বীমা এবং গরম থেকে বাঁচানোর মতো নীতিমালা ছিল, যা বর্তমানে সৌদি আরবে অনুপস্থিত।”

সম্প্রতি, ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব সফরের মধ্যেই মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *