যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত মেনেনদেজ ভাইদের পুনরায় কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে: মুক্তি কি সম্ভব?
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বহুল আলোচিত মামলায়, মেনেনদেজ ভাইদের পুনরায় কারাদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে, এই দুই ভাই, লাইল এবং এরিক মেনেনদেজ, তাদের বাবা-মাকে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কারাবাসের পর, তাদের পুনরায় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এখন তারা প্যারোলের (শর্তসাপেক্ষ মুক্তি) জন্য আবেদন করতে পারবেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু ঘটনার সময় ভাইদের বয়স ২৬ বছরের কম ছিল, তাই ক্যালিফোর্নিয়ার “তরুণ অপরাধী” আইনের অধীনে তাদের প্যারোলের সম্ভাবনা রয়েছে। এই আইনের অধীনে, কারাবাসের অর্ধেক মেয়াদ শেষ করার পরে তারা মুক্তি পাওয়ার যোগ্য হবেন। এই মামলার রায় নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
১৯৮৯ সালের ২০ আগস্ট, লাইল মেনেনদেজের বয়স ছিল ২১ বছর এবং এরিক মেনেনদেজের বয়স ছিল ১৮ বছর। তারা তাদের বাবা, জোসে মেনেনদেজ এবং মা, মেরি “কিটি” লুইজকে বেভারলি হিলসের বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর ১৯৯০ সালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ভাইদের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, জোসে মেনেনদেজ দীর্ঘদিন ধরে তাদের যৌন নির্যাতন করতেন এবং কিটি মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে এই আচরণে সহায়তা করতেন, যার ফলস্বরূপ তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে, সরকারি আইনজীবীরা জানান, এই হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের বাবা-মায়ের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। জোসে মেনেনদেজ একজন সফল সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র নির্বাহী ছিলেন এবং আরসিএ (RCA) রেকর্ড লেবেলের প্রধান ছিলেন, যেটির অধীনে ডুরান ডুরান-এর মতো শিল্পীরা কাজ করতেন।
১৯৯৪ সালের বিচারে জুরিদের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব দেখা দেওয়ায় রায় স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯৬ সালে, ভাইদের প্রথম-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যেখানে প্যারোলের কোনো সুযোগ ছিল না। এই মামলাটি মার্কিন সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে “মনস্টার্স: দ্য লাইল অ্যান্ড এরিক মেনেনদেজ স্টোরি” (Monsters: The Lyle and Erik Menendez Story) নামে একটি ধারাবাহিক মুক্তি পায়, যা এই হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনের কারণগুলো উভয় পরিবারের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরে। এছাড়াও, এই মামলার ওপর নির্মিত একটি পৃথক তথ্যচিত্রও প্রকাশিত হয়েছে। এই ঘটনার পর, জনসাধারণের মধ্যে তাদের মুক্তির দাবি জোরালো হয়, এমনকি কিম কার্দাশিয়ান ও রোজী ও’ডোনেলের মতো তারকারাও তাদের মুক্তির পক্ষে কথা বলেন।
বর্তমানে, লাইল এবং এরিক ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো শহরের রিচার্ড জে. ডোনোভান কারেকশনাল ফ্যাসিলিটিতে বন্দী রয়েছেন। পুনরায় কারাদণ্ডের ফলে তাদের মুক্তি পাওয়ার তিনটি সম্ভাব্য পথ তৈরি হয়েছে। প্রথমটি হলো প্যারোল বোর্ড কর্তৃক তাদের মুক্তি অনুমোদন করা, দ্বিতীয়টি হলো ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের (Gavin Newsom) ক্ষমা ঘোষণা, এবং তৃতীয়টি হলো নতুন করে বিচার।
লস অ্যাঞ্জেলেস সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক মাইকেল জেসিক (Michael Jesic) এই পুনরায় কারাদণ্ডের রায় দেন। তিনি তার রায়ে বলেন, যদিও এই অপরাধ “ভয়াবহ”, তবে কারাগারে ভাইদের “পুনর্বাসন” একটি “আশ্চর্যজনক” বিষয় ছিল। আদালতের শুনানিতে ভাইদের পরিবারের সদস্যরা তাদের মুক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেন। লাইল এবং এরিকের প্রথম চাচাতো বোন, আনামারিয়া বারাল্ট (Anamaria Baralt) আদালতকে জানান, পরিবারের উভয় পক্ষই তাদের ক্ষমা করে দিয়েছে।
তবে, সরকারি কৌঁসুলি হাবিব বালিয়ান (Habib Balian) পরিবারের সদস্যদের সাক্ষ্যে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং যুক্তি দেন যে, আদালত নিশ্চিত হতে পারে না যে, ভাইয়েরা ভবিষ্যতে আর কোনো সহিংস অপরাধ করবে না।
গত কয়েক বছরে, নতুন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা আইনজীবীরা বলছেন যে জোসের দ্বারা ভাইদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে সমর্থন করে। এর মধ্যে রয়েছে এরিকের লেখা একটি চিঠি, যেখানে তিনি ১৭ বছর বয়সে বাবার যৌন নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও, ১৯৮০-এর দশকের একটি ব্যান্ড দলের সদস্য, রয় রোসেলো (Roy Rossello) প্রকাশ্যে জানান যে জোসে তাকেও যৌন নির্যাতন করেছিলেন।
প্যারোলের জন্য তাদের মুক্তি পাওয়ার আগে, ভাইদের একটি উপযুক্ত কারণ দর্শাতে হবে। আগামী ১৩ই জুন, তারা প্যারোল বোর্ডের শুনানিতে অংশ নেবেন, যেখানে তাদের ঝুঁকির মূল্যায়ন করা হবে। এরপর গভর্নর নিউসামের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা