গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, যা আলোচনার মধ্যেই এক গভীর মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
আল জাজিরার খবরে প্রকাশ, বুধবার সকাল থেকে চালানো হামলায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে।
এদের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছে বহু মানুষ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু জাবালিয়ায় প্রায় ৫০ জন এবং খান ইউনিসে আরও ১০ জন নিহত হয়েছে।
যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া শিশুদের মরদেহ উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকর্মীরা হাতুড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে কাজ করছেন।
তাদের একমাত্র আলোর উৎস ছিল মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট।
গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানিয়েছেন, ইসরায়েল একটি “পরিকল্পিত ও তীব্র” বিমান হামলা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “মূলত আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য হলো পরিবারগুলোকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা এবং অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা, যা তাদের গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনাকে সহজ করবে।”
আবু আজ্জুম যোগ করেন, “এটা খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা এবং এটি গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশু ও বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর মানবিক দুর্দশার ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।”
এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন কাতারে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল হামাসের সঙ্গে আলোচনার জন্য উপস্থিত রয়েছে।
কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা চলছে।
এর আগে, ইসরায়েলি-মার্কিন বন্দী এডান আলেকজান্ডারকে স্বল্প সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার আবারও বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করা হবে না।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৫২,৯৮০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলের এই হামলায় গাজার অধিকাংশ শহর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানকার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস-এর নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামলায় অন্তত ১,১৩৯ জন নিহত হয়।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে।
আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল অবরোধ শিথিল না করলে এবং সামরিক হামলা বন্ধ না করলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নেতানিয়াহুর ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে “একটি লজ্জাজনক বিষয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা একটি বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার যা করছে, তা অগ্রহণযোগ্য।
সেখানে কোনো ওষুধ নেই। আহতদের বের করা যাচ্ছে না, ডাক্তাররা ঢুকতে পারছেন না।
এটা একটা লজ্জাজনক বিষয়।
গত মাসে মিশরের এল-আরিশ হাসপাতালে আহত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ম্যাক্রোঁ মানবিক ত্রাণ পাঠানোর জন্য গাজার সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এরপর অবশ্যই আমাদের হামাসকে নিরস্ত্র করতে, জিম্মিদের মুক্ত করতে এবং একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।”
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এক মিলিয়ন মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার সংগ্রহ করতে পারছে না।
ইসরায়েল গত ১০ সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে খাদ্য, আশ্রয়, ওষুধ এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।
গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ জীবন ধারণের জন্য বাইরের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, কারণ ইসরায়েলের ১৯ মাসের সামরিক অভিযানে সেখানে খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা