শিরোনাম: শূকর থেকে প্রতিস্থাপিত কিডনি: জীবন ফিরে পাওয়ার নতুন দিগন্ত?
ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া এক মার্কিন নাগরিক, ৬৭ বছর বয়সী টিম অ্যান্ড্রুস-এর জীবন বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এল এক অভিনব চিকিৎসা পদ্ধতি। গত জানুয়ারিতে, তিনি একটি পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করেন।
এই ধরনের চিকিৎসা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এটি করেছেন হাতে গোনা কয়েকজন। তবে, এই মুহূর্তে তিনি-ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি শূকরের কিডনি নিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অ্যান্ড্রুসের কিডনি ধীরে ধীরে কার্যকারিতা হারাতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, জীবনধারণের জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস-এর উপর তাকে সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হতে হয়।
ডায়ালাইসিস একদিকে যেমন জীবন বাঁচিয়ে রেখেছিল, তেমনই শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে তার উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করছিল। তিনি জানান, ডায়ালাইসিস-এর কারণে তিনি এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন যে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল।
চিকিৎসকরা জানান, মানবদেহে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ পাওয়া কঠিন। সাধারণত এই ধরনের অঙ্গের জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়।
অনেক সময় অঙ্গ পাওয়ার আগেই রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, চিকিৎসকরা শূকর থেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছিলেন। কারণ শূকরের অঙ্গ মানুষের শরীরের জন্য উপযোগী করে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর, অ্যান্ড্রুস ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (Mass General) কিডনি প্রতিস্থাপন বিভাগের প্রধান ড. লিওনার্দো রিয়েলার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা যখন এই প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন অ্যান্ড্রুস-কে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে বলা হয়।
এর জন্য তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করা শুরু করেন এবং ওজন কমান।
অপারেশন সফল হওয়ার পর অ্যান্ড্রুস-এর শারীরিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি হতে শুরু করে। ডায়ালাইসিস থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি নতুন করে জীবন ফিরে পান।
বর্তমানে তিনি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
তবে, চিকিৎসকরা মনে করেন, এই চিকিৎসা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রতিস্থাপিত কিডনি কতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে, সে বিষয়েও এখনো গবেষণা চলছে।
তবে, এই ধরনের উদ্ভাবন চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যা ভবিষ্যতে কিডনি বিকল রোগীদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।
এই বিষয়ে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন রোগীর শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যদিও তাঁদের মধ্যে কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে, তবে চিকিৎসকরা এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। বিশেষ করে, যখন মানুষের শরীরে অঙ্গের অভাব দেখা যায়, তখন এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।