শিরোনাম: নীরবতা ভেঙে মুক্তি: খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের এক সংগ্রামী যাত্রা।
২০১৫ সালে, সারা আজিজা নামের এক তরুণী সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার এক শিক্ষক ক্লাসে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার কথা বলেন। সেই সূত্রে তিনি প্রথমবারের মতো নিজের খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক অসুস্থতা নিয়ে লেখেন।
‘অ্যানোরেক্সিয়া’ শব্দটি তিনি প্রথম ব্যবহার করেন, যদিও এই রোগের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল অনেক আগে থেকেই।
নিজের ভেতরের কষ্টগুলো তিনি প্রথমে সবার থেকে লুকিয়ে রাখতেন। বন্ধুদের কাছেও বিষয়টি গোপন ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে।
চিকিৎসকদের পরামর্শে ওজন বাড়ানোর জন্য তিনি একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানে, খাবার নিয়ে তার পুরনো ভীতিগুলো নতুন করে সামনে আসে। প্রতিদিন তাকে প্রচুর ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে হতো।
আজিজা জানান, প্রথমদিকে তিনি তার অসুস্থতা নিয়ে লিখলেও, পরে বুঝতে পারেন, সেই লেখাগুলোতে তার ভেতরের আসল গল্পটা ছিল না।
তার জীবনের গভীর ক্ষত, যেমন – যৌন নির্যাতন এবং ফিলিস্তিনি পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে হওয়া মানসিক আঘাতগুলো তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলোতে ছিল সাফল্যের একটি সরলরৈখিক চিত্র, যা আসলে তার ভেতরের জটিলতাগুলো প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
ছোট্ট একটি লেখার জন্য তিনি ৪০ ডলার পেয়েছিলেন। লেখাটি দ্রুত সম্পাদনা করা হয় এবং তার ভেতরের অনেক গভীর কথা বাদ দেওয়া হয়।
তার ফিলিস্তিনি পরিচয় এবং নারীত্বের দ্বিধা নিয়ে লেখা অংশও ছেঁটে ফেলা হয়। ফলে, গল্পটি আরও সংক্ষিপ্ত এবং মসৃণ হয়ে ওঠে।
যখন লেখাটি প্রকাশিত হয়, তখন আজিজা অনুভব করেন, যেন তিনি নিজের আসল গল্পটি হারিয়ে ফেলেছেন।
এরপর তিনি আরও কিছু লেখা প্রকাশ করেন, যেখানে তার আরোগ্য লাভের একটি আদর্শ চিত্র তুলে ধরা হয়। এই ধরনের লেখায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার গভীরতা এড়িয়ে যাওয়া হয়, যা সাধারণত পশ্চিমা বিশ্বে বেশি দেখা যায়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই ধরনের সরলীকৃত বর্ণনা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেক কঠিন।
চিকিৎসার সময় আজিজা বুঝতে পারেন, এই খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক অসুস্থতা কেবল তার অতীতের আঘাতগুলোকেই আড়াল করেনি, বরং তার ভেতরের স্বপ্নগুলোকেও কেড়ে নিয়েছিল।
তিনি সবসময় একটি সুন্দর জীবন চেয়েছেন, যেখানে অর্জনের চেয়ে ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ থাকবে।
বর্তমানে তিনি তার জীবনের গল্প নিয়ে একটি বই লিখেছেন। বইটি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সেই নীরবতা ভেঙেছেন, যা তাকে দীর্ঘদিন ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিল।
তিনি এখন চান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ুক এবং খাদ্যাভ্যাস বিষয়ক অসুস্থতা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা হোক।
সারা আজিজার এই যাত্রা আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। এটি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলার সাহস জোগায় এবং আরোগ্য লাভের পথে সঠিক পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: পিপল