আতঙ্কের প্রতিচ্ছবি: ‘সাউন্ড অফ ফলিং’ – এক জার্মান খামারের গল্প!

জার্মান পরিচালক মাশা শিলিনস্কি’র নতুন ছবি ‘সাউন্ড অফ ফলিং’ কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায়। ছবিটির বিষয়, নির্মাণশৈলী এবং এর গভীর মনস্তাত্ত্বিক ব্যঞ্জনা সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

জার্মানীর একটি খামারবাড়ির প্রেক্ষাপটে, আন্তঃ-প্রজন্মের বেদনা, লজ্জা এবং অতীতের স্মৃতি কিভাবে একটি পরিবারের উপর ছায়া ফেলে, তাই এই ছবির মূল বিষয়।

ছবিটি চারটি ভিন্ন সময়ে নির্মিত, যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আধুনিক জার্মানির সময়ের একটি পরিবারের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হলো একটি খামারবাড়ি, যা সাক্ষী থাকে নানা ঘটনার।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ফ্রিৎজ (Filip Schnack এবং Martin Rother) নামের এক সৈনিকের জীবনের ঘটনা দেখা যায়, যিনি যুদ্ধে আহত হয়ে তার একটি পা হারান। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনগুলো ছবিতে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

এই সময়ে তরুণী ট্রুডির (Luzia Oppermann) উপর পরিবারের সদস্যদের নানা ধরনের অত্যাচারের চিত্রও দেখা যায়।

সময়ের পরিবর্তনে, একই বাড়িতে আলমা (Hanna Heckt) নামের এক ছোট্ট মেয়ের আগমন হয়, যে পরিবারের অদ্ভুত রীতি-নীতিগুলো দেখে। এরপর এরিকা (Lea Drinda) নামে এক তরুণীর আবির্ভাব হয়, যে তার বয়স্ক “কাকা” ফ্রিৎজের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

ছবিতে জার্মানীর পূর্বাঞ্চলের (জিডিআর) সময়ের একটি দৃশ্যও দেখা যায়, যেখানে অ্যাঞ্জেলিকা (Lena Urzendowsky) নামের এক কিশোরী তার কাকা উওয়ের (Konstantin Lindhorst) দ্বারা নিপীড়িত হয়। অ্যাঞ্জেলিকার চাচাতো ভাই রাইনার (Florian Geisselmann) গোপনে তাকে ভালোবাসে, কিন্তু অ্যাঞ্জেলিকা যেন এক বন্দী জীবনের শিকার।

সবশেষে, আধুনিক জার্মানিতে, লেনকা (Laeni Geiseler) কায়া (Ninel Geiger) নামের এক মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, যার মা মারা গেছে। ছবিটিতে সময়ের সাথে সাথে চরিত্রগুলোর মধ্যে সম্পর্কগুলো ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়।

তাদের মধ্যে একটি যোগসূত্র হলো সেই খামারবাড়ি এবং একটি নদী, যা একসময় পশ্চিম জার্মানির সীমান্ত ছিল। এই নদীর মধ্যে থাকা কিছু প্রাণী, যেমন – কাদার মধ্যে থাকা বীভৎস ইলের দৃশ্য, দর্শকদের মনে ভীতির সঞ্চার করে।

“সাউন্ড অফ ফলিং” ছবিটি আন্তঃপ্রজন্মের মানসিক আঘাত, অতীতের স্মৃতি এবং পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে তৈরি। পরিচালক মাশা শিলিনস্কি’র ক্যামেরার কাজ, আবহ সংগীত এবং অভিনেতাদের অসাধারণ অভিনয় ছবিটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

সমালোচকরা ছবিটিকে একটি “ভূতের গল্পের” সাথে তুলনা করেছেন, যেখানে ভয়ের একটি সূক্ষ্ম অনুভূতি প্রতিটি দৃশ্যে বিদ্যমান। ছবিটি জার্মান সমাজের একটি কঠিন চিত্র তুলে ধরে, যা দর্শকদের গভীর ভাবনার খোরাক জোগায়।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *