পুরুষদের সহিংসতা: ভয়াবহ পরিণতির দিকে?

পুরুষ এবং মহিলাদের আবেগ: সমাজের ব্যর্থতা?

অধিকাংশ সংস্কৃতিতেই, বিশেষ করে আমাদের সমাজে, পুরুষদের রাগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। তারা যেন সবসময় শক্তিশালী এবং আবেগহীন থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা করা হয়।

কিন্তু এর ফলস্বরূপ, অনেক পুরুষ তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে এবং রাগের বশে এমন কিছু করে ফেলে যা তাদের এবং অন্যদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যাডোলেসেন্স’ নামের একটি সিরিজে কিশোর বয়সে ছেলেদের মানসিক অবস্থা এবং সমাজে তাদের বেড়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এই সিরিজে দেখানো হয়েছে, কিভাবে সামান্য বিষয় থেকে একজন কিশোরের মধ্যে প্রতিশোধের প্রবণতা তৈরি হয় এবং তা সহিংস রূপ নিতে পারে।

আমাদের সমাজে ছেলেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে না শেখানোর একটি বড় কারণ হল, শৈশব থেকে তাদের এমনভাবে বড় করা হয় যে, রাগ প্রকাশ করা দুর্বলতা নয়, বরং এটি স্বাভাবিক।

বিদ্যালয়ে বা খেলার মাঠে সামান্য কিছু হলেই তারা মারামারি বা ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময়, তাদের এই ধরনের আচরণকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

এমনকি, পরিবার থেকেও তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার পরিবর্তে, চুপ থাকতে বা প্রতিশোধ নিতে উৎসাহিত করা হয়। এর ফলে, তারা ধীরে ধীরে তাদের আবেগ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা হারিয়ে ফেলে।

অন্যদিকে, মেয়েদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তাদের দুর্বল এবং সংবেদনশীল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তাদের আবেগ প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা হলেও, সমাজের চোখে এটি দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। ফলে, তারাও নিজেদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করে এবং এক ধরনের মানসিক চাপে থাকে।

এই সমস্যা সমাধানে পরিবার এবং বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ছোটবেলা থেকেই শিশুদের তাদের অনুভূতিগুলো চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর সঠিক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে শেখানো উচিত। রাগ হলে, তাদের শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শেখানো দরকার।

তাদের বোঝাতে হবে, রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা দুর্বলতা নয়, বরং এটি মানসিক শক্তির পরিচয়। বিদ্যালয়ে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেখানে শিশুরা তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারবে।

“টাইম আউট” নামক একটি পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুদের তাদের অনুভূতিগুলো বুঝতে এবং সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখানো যেতে পারে।

যখন কোনো শিশু রেগে যায়, তখন তাকে কিছুক্ষণ একা থাকতে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে বলা যেতে পারে। এরপর, তাকে তার রাগের কারণগুলো খুঁজে বের করতে এবং সেগুলোকে কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

বিদ্যালয়ে, এই ধরনের অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং সহানুভূতি তৈরি করা যেতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাটাও জরুরি। শিশুদের বোঝাতে হবে, মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

তাদের মধ্যে যদি কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে তারা যেন সাহায্য চাইতে দ্বিধা বোধ না করে। অভিভাবকদেরও এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়তে হলে, ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের আবেগগুলো বুঝতে এবং সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করতে হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *