ব্রিটিশ জাদুঘরে ভারতীয় ধর্মগুলির এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী: ঐতিহ্য আর বর্তমানের মেলবন্ধন।
লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এক বিশেষ প্রদর্শনী – “প্রাচীন ভারত: জীবন্ত ঐতিহ্য”। এই প্রদর্শনীতে হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ – এই তিনটি প্রধান ভারতীয় ধর্ম কীভাবে তাদের শিকড় গেড়ে আজও পর্যন্ত টিকে আছে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
প্রদর্শনীটি শুধু প্রাচীন নিদর্শনের সমাহার নয়, বরং এটি ধর্মগুলির গভীরতা এবং তাদের থেকে উদ্ভূত সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলিকেও তুলে ধরেছে।
প্রদর্শনীটির মূল আকর্ষণ হল, দর্শকদের সরাসরি দেব-দেবীর প্রতিমূর্তির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ। মূর্তিগুলি এমন উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে দর্শকরা তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারেন।
এই প্রত্যক্ষ দর্শনের (darshan) ধারণাটি ভারতীয় ধর্মগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল একটি দৃশ্যই নয়, বরং ভক্তদের জন্য এক গভীর সংযোগ এবং মানসিক শান্তির উৎস।
প্রদর্শনীতে প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন দেবদেবী, যেমন – মুম্বাইয়ের দেবী মুম্বা, বিষ্ণু, বুদ্ধ, এবং জৈন তীর্থংকরদের মূর্তি ও চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এই সকল শিল্পকর্মের মাধ্যমে ধর্মগুলির মধ্যে বিদ্যমান কিছু সাধারণ প্রতীক ও ধারণার (যেমন – পদ্ম, সাপ, সিংহ) উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা এই প্রতীকগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যেকার যোগসূত্রগুলি উপলব্ধি করতে পারবেন।
প্রদর্শনীতে শুধু ধর্মীয় ঐতিহ্যই নয়, বরং এই নিদর্শনগুলির সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, ঔপনিবেশিক আমলে কীভাবে এই শিল্পকর্মগুলি সংগৃহীত হয়েছিল, সেই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া হয়েছে।
এই কাজটি করতে গিয়ে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রদর্শনীতে প্রাণীজ উপাদান ব্যবহার করা হয়নি এবং পবিত্র বস্তুগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রদর্শনীটির কিউরেটর সুষমা জানসারি, যিনি নিজেও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে একটি বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “আমরা দেখাতে চেয়েছি যে, এই ঐতিহ্যগুলো কেবল ‘বিদেশি’ কিছু নয় – এগুলো আমাদের সকলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ।” প্রদর্শনীটি বর্তমানে ভারতে বসবাসকারী এবং যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
এই প্রদর্শনীতে ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা মূল্যবান শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বাস্তু সংগ্রহালয় (পূর্বে প্রিন্স অফ ওয়েলস মিউজিয়াম অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া) থেকে আনা কিছু নিদর্শন।
এছাড়াও, অমরাবতী স্তূপের (dome-shaped shrine) কিছু কারুকার্যও এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে।
সুষমা জানসারির মতে, এই ধরনের প্রদর্শনীগুলি জাদুঘরগুলির কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে। এখন জাদুঘরগুলি শুধু তাদের সংগ্রহগুলি প্রদর্শন করে না, বরং দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে চাইছে।
বিশেষ করে, এই ধরনের প্রদর্শনীগুলিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
“প্রাচীন ভারত: জীবন্ত ঐতিহ্য” প্রদর্শনীটি আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ব্রিটিশ জাদুঘরে চলবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian