পাহাড়ের বুকে লুকানো ‘দৈত্য’! ডার্টমুরের পাথরের চূড়াগুলির অজানা জগৎ

বাংলার বুকে প্রকৃতির এক বিস্ময়: ডার্টমোরের প্রাচীন ‘টর’ (Tor)। যুক্তরাজ্যের ডার্টমোর অঞ্চলে, প্রকৃতির বুকে যেন জেগে আছে ইতিহাসের সাক্ষীস্বরূপ কিছু পাথুরে স্তম্ভ – যাদের বলা হয় ‘টর’ (Tor)।

এই টরগুলি আসলে বিশাল শিলাখন্ড, যা কয়েক কোটি বছর আগে গঠিত হয়েছিল। ডার্টমোরের এই অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি এখন বিশ্বজুড়ে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ।

ডার্টমোরের এই টরগুলি কেবল পাথরের স্তূপ নয়, বরং এক একটি জীবন্ত ইতিহাস। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় ২৮০ মিলিয়ন বছর আগে এই টরগুলির সৃষ্টি হয়েছিল।

সময়ের সাথে সাথে প্রকৃতির নানা ঘাত-প্রতিঘাতে তাদের রূপ পরিবর্তন হয়েছে, তৈরি হয়েছে নানা ধরনের আকার ও গঠন। কোনোটি পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দিগন্তের দিকে চেয়ে থাকে, আবার কোনোটি গভীর উপত্যকায় লুকিয়ে থাকে।

এদের কোনোটি দেখতে দুর্গের মতো, কোনোটি দানবের মতো, আবার কোনোটি যেন দৈত্যের প্রতিমূর্তি। এদের অদ্ভুত গড়ন মানুষের মনে যুগ যুগ ধরে কৌতূহল জাগিয়েছে, জন্ম দিয়েছে নানা কল্পকাহিনী ও কিংবদন্তীর।

এই টরগুলির মধ্যে অন্যতম হলো লাকি টর, যা একটি নদীর পাশে অবস্থিত। এটি সবুজ গাছপালায় আবৃত থাকার কারণে দূর থেকে অনেকটা ঘুমন্ত রাজকুমারীর দুর্গের মতো দেখায়।

ব্ল্যাকিংস্টোন রক-এর (Blackingstone Rock) পাশে রয়েছে একটি অসাধারণ ধাতব সিঁড়ি, যা যেন আকাশের দিকে উঠে গেছে। আবার হেন টর (Hen Tor) নামের একটি টর রয়েছে, যা পাথরের সমুদ্রে একা দাঁড়িয়ে থাকে, যেন এক অচেনা দ্বীপ।

ওয়াটার্ন টর (Watern Tor) বরফের দ্বারা গঠিত, যা একটি অসাধারণ শিল্পকর্মের মতো।

ঐতিহাসিকদের মতে, একসময় এই টরগুলি সম্ভবত স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো। প্রাচীনকালে মানুষ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করত এবং প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানকে পূজা করত।

এই টরগুলি তাদের কাছে হয়তো এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করত। তারা হয়তো বিশ্বাস করত যে এই পাথরের স্তম্ভগুলির মধ্যে ঐশ্বরিক শক্তি বিদ্যমান।

ডার্টমোরের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে প্রতি বছর এখানে একটি উৎসবের আয়োজন করা হয়, যার নাম ‘ডার্টমুর টর্স ফেস্টিভ্যাল’ (Dartmoor Tors Festival)। এই উৎসবে শিল্পী, লেখক, পরিবেশবিদ, এবং ইতিহাসবিদদের মিলন ঘটে।

তাঁরা প্রকৃতির প্রতি মানুষের আবেগ এবং ডার্টমোরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গভীরতা নিয়ে আলোচনা করেন। উৎসবের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়।

প্রকৃতির এই বিস্ময়কর সৃষ্টিগুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্কের কথা। ডার্টমোরের টরগুলি (Tor) শুধু পাথরখন্ড নয়, বরং প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ।

আমাদের সকলেরই উচিত প্রকৃতির এই ঐশ্বর্যকে রক্ষা করা এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করা।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *