গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন হাজারো ফিলিস্তিনি।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে নিহত হয়েছেন বহু ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
খান ইউনিসসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বোমা হামলায় সেখানকার হাসপাতালগুলোতে আহতদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।
গাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি হাসান মোকেবল আল জাজিরাকে জানান, সাধারণ মানুষের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “গত ১৯ মাস ধরে তারা গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে।
গাজায় আর কী অবশিষ্ট আছে? নিরীহ শিশুগুলো মারা যাচ্ছে। এখানে তো কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীও নেই। বেশিরভাগ নিহতই বয়স্ক মানুষ।
হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক হাসান সামুর। খান ইউনিসের কাছে বানি সুহেইলা শহরে ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবারের আরও অনেকে নিহত হয়েছেন।
এর আগে, নাসের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার সময় আরেক সাংবাদিক হাসান আসলিহ ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হন। তিনি এর আগে হওয়া হামলায় আহত হয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যম কর্মীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১৭০ জনের বেশি সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী নিহত হয়েছেন।
গাজা বর্তমানে সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এদিকে, গাজা শহর থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে দ্রুত এলাকা ছাড়তে বলেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। আতঙ্কে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে।
আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানান, “আমরা পরিবারগুলোকে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখছি। শিশু এবং বৃদ্ধরা যা পারছে, তাই নিয়ে পালাচ্ছে।
তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোও ইসরায়েলি বোমায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা বাড়ছে। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ফিলিস্তিনের শহর ও গ্রামগুলো ধ্বংস করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি রাফা, খান ইউনিস ও গাজার মতো ফিলিস্তিনের ব্রুকিন গ্রামকেও ‘ধ্বংস’ করার কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিভিন্ন শহরে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। নাবলুস, বেথলেহেম, এবং দুরাসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক ধরপাকড় ও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
কালান্দিয়া, ইয়াবাদ, ফাওয়ার এবং আসকার ক্যাম্পের বাসিন্দারাও তাদের বাড়িতে অভিযান, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
ফিলিস্তিনিরা যখন নাকবার ৭৭তম বার্ষিকী পালন করছে, ঠিক তখনই এই সহিংসতা বাড়ছে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা হয়, যা ইতিহাসে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয় হিসেবে পরিচিত।
সে সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়। ৫৩০টিরও বেশি ফিলিস্তিনি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ৫৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যম স্বাধীনতা বিষয়ক সংগঠনগুলো এই পরিস্থিতিকে গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করেছে।
গাজা এবং পশ্চিম তীর— উভয় স্থানেই হামলার কারণে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।