দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন করে সাজানোই এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য।
কয়েক মাস ধরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে, যার প্রধান কারণ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতি এবং শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর ‘গণহত্যা’র অভিযোগ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা।
এই বৈঠকের ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বেশ কিছু মানুষকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করেছে। ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পেছনে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যদিও বিশেষজ্ঞরা এর কোনো প্রমাণ পাননি।
জানা গেছে, রামাফোসা ও ট্রাম্পের মধ্যে আগামী বুধবার হোয়াইট হাউসে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্সি অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সফরে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
তাদের মতে, এই সফর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে নতুন করে শুরু করার একটি সুযোগ তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে সম্পর্কের অবনতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতির সমালোচনা করেছে এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice – ICJ) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা মামলার বিরোধিতা করেছে।
এছাড়া, শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরায়।
আফ্রিকানরা মূলত ডাচ ঔপনিবেশিকদের বংশধর, যারা প্রায় পাঁচ দশক ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের দাবি, শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো নিপীড়ন চালানো হচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এর আগে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভুল তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার আরেকটি কারণ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ‘সংরক্ষণ নীতি’, যা এক সময়ের নিপীড়িত কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে। ভূমি সংস্কার বিষয়ক একটি নতুন আইনে সরকার প্রয়োজনে কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জনসাধারণের স্বার্থে জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে।
যদিও সরকার বলছে, এই আইন কোনো জমি দখলের হাতিয়ার নয়, বরং অব্যবহৃত জমি জনসাধারণের মধ্যে বিতরণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, তবে শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের অনেকে মনে করেন, এর মাধ্যমে তাদের জমি কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করা হতে পারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ, যাদের হাতে দেশের ৭০ শতাংশের বেশি জমি রয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় ব্যবস্থাপক পদগুলোতেও তাদের আধিপত্য বিদ্যমান।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীনের পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রেসিডেন্ট রামাফোসা একাধিকবার ট্রাম্পের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এই বৈঠকের ফলস্বরূপ দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা