বদলে যাওয়া সময়ে লিলি লেডবেটারের চরিত্রে ক্লার্কসন: সিনেমাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

শিরোনাম: ‘লিলি’: কর্মক্ষেত্রে নারী অধিকারের লড়াই, নতুন ছবিতে অভিনেত্রী প্যাট্রিসিয়া ক্লার্কসন

নিউ ইয়র্ক থেকে: নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের অবিরাম সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র ‘লিলি’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী প্যাট্রিসিয়া ক্লার্কসন। ছবিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত লিলি লেডবেটারের জীবন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই চলচ্চিত্র মুক্তির প্রাক্কালে ক্লার্কসন মনে করেন, ছবিটি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিলি লেডবেটার ছিলেন একজন সাধারণ নারী, যিনি দীর্ঘদিন ধরে একই কাজ করার পরও পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছিলেন। বিষয়টি জানার পর তিনি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেন। তার এই লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘লিলি লেডবেটার ফেয়ার পে অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন, যা কর্মীদের বেতন বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা দেয়।

ছবিতে লিলি লেডবেটারের চরিত্রে অভিনয় করা প্রসঙ্গে ক্লার্কসন জানান, তিনি লিলিকে সরাসরি দেখেননি, কারণ তিনি চরিত্রটিকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন। অভিনেত্রী বলেন, “আমি চেয়েছি লিলি লেডবেটারের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে একজন অভিনেত্রী হিসেবে, একজন নারী হিসেবে এবং একজন মানুষ হিসেবে আমার সেরাটা দিতে। আর সেটা করতে হলে, চরিত্রটির প্রতিচ্ছবি নিজের মধ্যে ধারণ করাটা জরুরি।”

চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বর্তমানে এর মুক্তি নিয়ে ক্লার্কসন বলেন, “আমি লিলি’র সঙ্গে প্রেস ট্যুরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, কিন্তু তিনি আমাদের মাঝে নেই। হয়তো এই মুহূর্তে, যখন ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ এটি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেবে যে, কিছু অর্জন এখনও সম্ভব।”

প্যাট্রিসিয়া ক্লার্কসন মনে করেন, লিলি লেডবেটার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সবার জন্য সমান অধিকারের পক্ষে। তিনি জানান, “সমান বেতন—এটিই ছিল তাঁর মূল কথা। তিনি কোনো দল বা মতের প্রতি পক্ষপাত দেখাননি।”

ক্লার্কসন এর আগে ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শি সেড’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন, যেখানে হলিউডে নারীদের প্রতি হওয়া যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলা হয়। দুটি ছবির মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উভয় ছবিই কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি হওয়া অবিচারের চিত্র তুলে ধরে।” ক্লার্কসন আরও যোগ করেন, “হলিউডে নারীদের অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, কারণ আমি ১৯৮৫ সাল থেকে এখানে কাজ করছি। শুরুতে, আমাদের পুরুষ প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করতে হোটেলে যেতে হতো, যেখানে আমাদের পারিশ্রমিকও কম ছিল।”

লিলির চরিত্রে অভিনয় করা এই অভিনেত্রী দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “লিলি বারবার উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং আপনারা যখন তাঁর জীবন দেখছেন, তখন গর্বিত অনুভব করবেন।”

যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই চলচ্চিত্র বাংলাদেশের দর্শকদের কাছেও বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ, এখানেও কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিলি লেডবেটারের জীবন ও সংগ্রাম, বাংলাদেশের নারীদেরও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে উৎসাহিত করতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *