মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা একটি বিশাল কর প্যাকেজ চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা সম্ভবত আগামী মে মাসের শেষ নাগাদ অনুমোদন পেতে পারে। এই প্যাকেজটি সরাসরি বাংলাদেশের মানুষের উপর প্রভাব ফেলবে না, তবে এর বিশ্ব অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব থাকতে পারে, যা পরোক্ষভাবে আমাদের দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রস্তাবিত কর পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হল, ২০১৬ সালের ট্যাক্স কাটস্ অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট-এর অধীনে দেওয়া ব্যক্তিগত আয়কর সংক্রান্ত সুবিধাগুলি স্থায়ী করা। এই আইনটি আগে বিভিন্ন সময়সীমার জন্য ছিল, যা এখন সম্ভবত আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বহাল থাকবে।
এই পরিবর্তনের ফলে, অনেক মার্কিন করদাতা তাঁদের বর্তমান সুবিধাগুলি অব্যাহত রাখতে পারবেন, যা তাঁদের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বস্তি দেবে।
প্যাকেজে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের জন্য সাময়িক কর ছাড়ের প্রস্তাবও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বাবা-মা, প্রবীণ নাগরিক এবং টিপ-এর (বখশিশ) উপর নির্ভরশীল কর্মীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট কমিটি অন ট্যাক্সেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, কম আয়ের মানুষেরা বাদে অধিকাংশ করদাতার ফেডারেল আয়কর হারের ক্ষেত্রে আগামী দশকে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বছরে ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করা পরিবারগুলির গড় করের হার ২০২৭ সালে ১৩.১ শতাংশ থেকে কমে ১১.৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
অন্যদিকে, যাদের আয় ১৫,০০০ ডলারের কম, তাদের করের হার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪.৮ শতাংশ হতে পারে। এর মূল কারণ হল, ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ভর্তুকিগুলি বাতিল হয়ে যাওয়া।
তবে, এই কর প্যাকেজের কিছু দিক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত কিছু প্রস্তাব, যেমন—মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিগুলিতে কাটছাঁট, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ট্যাক্স ক্রেডিট বাতিল এবং ফেডারেল স্টুডেন্ট লোন প্রোগ্রামের পুনর্গঠন—কিছু মানুষের আর্থিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
আসুন, দেখে নেওয়া যাক এই প্যাকেজের ফলে কারা সুবিধা পেতে পারেন:
* **বাবা-মা:** ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাবা-মায়েরা শিশুদের জন্য বর্ধিত ট্যাক্স ক্রেডিট পাবেন।
বর্তমানে এটি প্রতি সন্তানের জন্য ২,০০০ ডলার, যা বেড়ে ২,৫০০ ডলারে পৌঁছতে পারে। তবে, এই সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য হবে। যেমন—বাবা-মাকে অবশ্যই তাঁদের সন্তানদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর সরবরাহ করতে হবে।
* **প্রবীণ নাগরিক:** কম ও মাঝারি আয়ের প্রবীণ নাগরিকরা ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তাঁদের স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনে ৪,০০০ ডলার বৃদ্ধি পেতে দেখবেন।
তবে, যাদের আয় বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সুবিধা কমে যাবে।
* **টিপ-এর উপর নির্ভরশীল কর্মী:** এই প্যাকেজের মাধ্যমে কিছু কর্মী তাঁদের টিপ থেকে পাওয়া আয়ের উপর ট্যাক্স ডিডাকশন-এর সুবিধা পাবেন।
তবে, এই সুবিধা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পেশার জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এটি ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
* **ঘণ্টা-ভিত্তিক কর্মী:** অনেক ঘণ্টা-ভিত্তিক কর্মী অতিরিক্ত সময়ের জন্য পাওয়া পারিশ্রমিকের উপর ফেডারেল আয়কর দেওয়া থেকে অব্যাহতি পাবেন।
* **গাড়ি মালিক:** অনেক করদাতা ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত গাড়ির লোনের সুদের উপর বছরে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত ডিডাকশন দাবি করতে পারবেন।
এই কর প্রস্তাবগুলি এখনও চূড়ান্ত নয় এবং এতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও, বিশ্ব অর্থনীতির উপর এর প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই, বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন