রোমানিয়ার নির্বাচন: বাতিল ঘোষণার পর কী হতে যাচ্ছে?

রোমানিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: পপুলিস্ট বনাম টেকনোক্র্যাট লড়াই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য এবং ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ রোমানিয়াতে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

আগামী নির্বাচনে একদিকে লড়ছেন ডানপন্থী পপুলিস্ট জর্জ সিমিয়ন এবং আরেক দিকে মধ্যপন্থী টেকনোক্র্যাট নিকুসোর ডান। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে যাচ্ছে দেশটির গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সবচেয়ে মেরুকরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন।

সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। দেশটির প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশের বসবাস রাজধানী বুখারেস্টে।

জর্জ সিমিয়ন ‘এলায়েন্স ফর দ্য ইউনিয়ন অফ রোমানিয়ানস’ (AUR) দলের নেতা। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং হাঙ্গেরির অভিবাসন বিরোধী নেতা ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করেন।

এই নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো কিয়েভকে সমর্থন যোগানোর বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তেমনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

গত ৪ঠা মে অনুষ্ঠিত প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনে ৩৮ বছর বয়সী সিমিয়ন ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, সাবেক গণিতবিদ নিকুসোর ডানের পক্ষে ছিল প্রায় ২০ শতাংশ ভোট।

এর আগে, অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য একটি নির্বাচন বাতিল করা হয়েছিল, যেখানে ক্যলিন জর্জেস্কু নামের একজন অতি-জাতীয়তাবাদী প্রার্থী চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছিলেন। তবে, অনিয়মিত অর্থায়ন এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে নির্বাচনটি বাতিল করা হয়।

সিমিয়ন এই বাতিল হওয়া নির্বাচনের কারণ অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং নির্বাচিত হলে পুনরায় নির্বাচনের আয়োজন করারও ঘোষণা দিয়েছেন।

সিমিয়নকে ইউক্রেন এবং মলদোভাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি অতীতে রোমানিয়ার পুরনো সীমান্ত পুনরুদ্ধার করারও আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া, ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে তিনি সন্দিহান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আনামারিয়া-নিকোলেটা সিওবানু সিমিয়নকে “চ্যামেলিয়নিক লিডার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, সিমিয়ন শুরুতে একজন মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি ডানপন্থী অবস্থানে চলে এসেছেন।

অন্যদিকে, নিকুসোর ড্যান নিজেকে দুর্নীতিবিরোধী হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা রাখতে নারাজ। তিনি মনে করেন, এইসব দল জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে।

ড্যান মূলত দেশের শহরগুলোতে বেশি সমর্থন পান। প্রথম রাউন্ডে সিমিয়নের থেকে প্রায় ২০ শতাংশ ভোটে পিছিয়ে থাকার পর, ডানের জন্য নির্বাচনে জয়ী হতে অতিরিক্ত সমর্থন প্রয়োজন।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, জর্জ সিমিয়নের এই ধরনের মনোভাব দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

রোমানিয়ার এই নির্বাচন দেশটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে কে নতুন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেবেন। উল্লেখ্য, যদি নতুন প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হন, তাহলে দেশটিতে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *