ট্রাম্পের দুর্নীতি: বিনামূল্যে প্লেন ও ক্রিপ্টো কয়েন নিয়ে ডেমোক্রেটদের তোলপাড়!

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের অভিযোগ, ট্রাম্প সম্ভবত নৈতিক বিধি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করছেন।

এর স্বপক্ষে তাঁরা কাতার থেকে একটি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ‘মিম কয়েন’ থেকে লাভ করার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ডেমোক্র্যাট নেতারা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। যদিও রিপাবলিকানরা এমন কিছু আইন প্রণয়নের চেষ্টা করছেন, যা মেডিকেয়ারের মতো কিছু সরকারি প্রকল্পের সুযোগ কমাতে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম স্কিফ এক বক্তব্যে ট্রাম্পের স্বার্থের সংঘাতের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই প্রশাসনের প্রথম ১১৪ দিন মার্কিন পরিবারগুলোর জন্য ছিল একের পর এক খারাপ ডিলের সময়। কিন্তু ট্রাম্প পরিবারের জন্য এই সময়টা ছিল দারুণ।”

ডেমোক্র্যাট ও বিভিন্ন নৈতিকতা বিষয়ক সংগঠনগুলো মনে করে, ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য দুর্নীতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

ডেমোক্রেটদের সঙ্গে যুক্ত ‘এন্ড সিটিজেনস ইউনাইটেড’-এর প্রেসিডেন্ট টিফানি মুলার বলেছেন, ডেমোক্র্যাটরা কীভাবে তাঁদের দুর্নীতিবিরোধী যুক্তি তুলে ধরেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জনগণের মধ্যে এই বিষয়ে আস্থার অভাব রয়েছে এবং যিনি এই আস্থা অর্জন করতে পারবেন, তিনিই নির্বাচনে জিতবেন।

মুলার আরও যোগ করেন, প্রতিদিন যে দুর্নীতি দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে কীভাবে তাঁদের জীবন জড়িয়ে আছে, সে বিষয়ে কথা বলতে হবে। একইসঙ্গে ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা কীভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই বিষয়গুলো ব্যবহার করছেন, সেটিও তুলে ধরতে হবে।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা যখন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ক্ষমতা দখল করে, তখন তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের প্রচারণার কৌশল তৈরি করেছিলেন।

রিপাবলিকান কৌশলবিদ ম্যাট গরমান বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের এই দুর্নীতির অভিযোগ একটি ‘চকচকে বস্তু’। এটি দলটির দুর্বল বার্তা দেওয়ার প্রমাণ।

গরমানের মতে, ট্রাম্প যখন বেতন ও অবৈধ অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন, তখন ডেমোক্র্যাটদের গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের মতো বিষয় নিয়ে কথা বলাটা তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।

অভিযোগ উঠেছে, ট্রাম্প তাঁর ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে নিজের কাছে আসার সুযোগ বিক্রি করছেন। গত মাসে, ট্রাম্পের মিম কয়েনের ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা হয়েছিল, কয়েনের শীর্ষ হোল্ডারদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি ডিনার এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ব্রেনান সেন্টারের নির্বাচন ও সরকার কর্মসূচির পরিচালক ড্যানিয়েল উইনার বলেছেন, কাতার থেকে বিমান পাওয়া এবং প্রেসিডেন্টের ক্রিপ্টোকারেন্সি, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় গুরুতর নৈতিক উদ্বেগের জন্ম দেয়।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, সরকারের কাছে আসা যেকোনো অনুদান সবসময় আইনের সম্পূর্ণ অনুগত থাকে।

ডেমোক্র্যাটরা এর আগেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

২০০৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁরা ‘দুর্নীতির সংস্কৃতি’র ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই সময়কার ভোটগ্রহণে দুর্নীতি ও নৈতিকতা ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

২০১৮ সালে ডেমোক্র্যাটরা যখন হাউসে ফিরে আসে, তখন তাঁরা ভোটাধিকার ও নৈতিক সংস্কারের একটি ব্যাপক প্রস্তাব পেশ করে, যা হোয়াইট হাউসের জন্য স্বার্থের সংঘাত আইনকে আরও শক্তিশালী করত।

প্রস্তাবটি হাউসে পাস হলেও ২০১৯ ও ২০২১ সালে সিনেটে আটকে যায়।

ভার্মন্টের স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের উপদেষ্টা ফাইজ শাকির বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পাশাপাশি একটি ইতিবাচক কর্মসূচি উপস্থাপন করা উচিত।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের পক্ষ সমর্থন করেছেন।

তিনি বলেছেন, ট্রাম্প লুকানোর মতো কিছু করেননি এবং এ বিষয়ে তিনি খুবই স্পষ্ট।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *