মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের দেওয়া একটি প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ভারত নাকি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক সম্পূর্ণভাবে তুলে নিতে রাজি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার কাতারের দোহায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প এই কথা বলেন।
ট্রাম্পের মতে, ভারত বিশ্বে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, “ভারতে পণ্য বিক্রি করা কঠিন। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে এমন একটি চুক্তিতে আসতে চাইছে, যেখানে কার্যত কোনো শুল্কই ধার্য করা হবে না।”
ট্রাম্পের মতে, ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর এত বেশি শুল্ক বসায় যে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সেভাবে বাড়তেই পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে গাড়ির ওপর ৭০ শতাংশ, কিছু নেটওয়ার্কিং সরঞ্জামের ওপর ২০ শতাংশ এবং চাল আমদানির ওপর ৮০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।
এছাড়া, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের জটিলতা ও বিধিনিষেধের শিকার হন।
যদি সত্যিই ভারত এই প্রস্তাব দেয়, তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় সুযোগ হতে পারে। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশে নিজেদের পণ্য রপ্তানি করতে পারবে মার্কিন কোম্পানিগুলো।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে বলেন, “তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) আমাদের জানিয়েছে, কোনো শুল্ক থাকবে না। আপনারা কি একমত? তারা সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী দেশ ছিল, আর এখন বলছে কোনো শুল্কই থাকবে না।”
যদিও ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। তবে, একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে, তার চেয়ে প্রায় ৪ হাজার ৫৭ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে অনেক দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে। ট্রাম্প এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন এবং অন্যান্য দেশের ওপর ‘পাল্টা শুল্ক’ বসানোরও হুমকি দিয়েছিলেন।
বর্তমানে ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ ‘পাল্টা শুল্ক’ বিদ্যমান।
গত সপ্তাহে, ট্রাম্প ব্রিটেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামো তৈরি করেন, যেখানে যুক্তরাজ্যের কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো এবং আরও বেশি মার্কিন পণ্য প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনও তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর বিষয়ে রাজি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাম্প যখন পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দেন, তখন তিনি বিশেষভাবে ভারতের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি ভারতের মূল্য সংযোজন কর এবং ডিজিটাল পরিষেবা কর নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
১৩ই ফেব্রুয়ারি তিনি বলেছিলেন, “অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভারত বেশি শুল্ক নেয়।”
এপ্রিল মাসের ২ তারিখে এক অনুষ্ঠানেও ট্রাম্প ভারতকে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করেন।
হোয়াইট হাউস গত মাসে জানিয়েছিল, ভারত যদি তাদের বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি বছরে কমপক্ষে ৫৩০ কোটি ডলার বাড়বে।
তবে, এই হিসাব কীভাবে করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও এই সময়ে উভয় দেশই একে অপরের থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে।
গত বছর ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রধান পণ্যের মধ্যে ছিল ওষুধ, যোগাযোগ সরঞ্জাম এবং পোশাক।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি হওয়া প্রধান পণ্যের মধ্যে ছিল তেল ও গ্যাস, রাসায়নিক দ্রব্য এবং মহাকাশ সরঞ্জাম।
তথ্য সূত্র: সিএনএন