ঐশ্বর্য ও বিদ্রোহ: ওয়াগনারের ‘পার্সিফাল’ নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা!

**রিচার্ড ওয়াগনার: শিল্পের পবিত্রতা ও বিতর্কিত উত্তরাধিকার**

পাশ্চাত্য ধ্রূপদী সঙ্গীতনাট্যের জগতে রিচার্ড ওয়াগনার এক অবিসংবাদিত নাম। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সঙ্গীতের প্রতি গভীর ভালোবাসাই তাঁকে কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে।

তবে, ওয়াগনারের জীবন এবং কর্ম, বিশেষ করে তাঁর অপেরাগুলো, সবসময়ই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি, তাঁর বিখ্যাত অপেরা *পার্সিফাল*-এর একটি নতুন পরিবেশনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যা এই জার্মান সুরকারের জটিল উত্তরাধিকারকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।

ওয়াগনারের মৃত্যুর পর তাঁর বিধবা স্ত্রী কসিমা ওয়াগনার, স্বামীর কাজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা করেন। তিনি চেয়েছিলেন, ওয়াগনারের অপেরাগুলো শুধুমাত্র বায়ারয়েথ উৎসবে পরিবেশিত হোক।

বায়ারয়েথ উৎসব ছিল ওয়াগনারের স্বপ্নের মঞ্চ, যেখানে তাঁর অপেরাগুলো পরিবেশিত হতো এক বিশেষ আঙ্গিকে। কসিমার এই ইচ্ছের পেছনে ছিল ওয়াগনারের কাজগুলোর পবিত্রতা রক্ষার ধারণা। তিনি মনে করতেন, এই অপেরাগুলো অন্য কোনো মঞ্চে পরিবেশিত হলে, তার আসল মহিমা ক্ষুণ্ণ হবে।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, ওয়াগনারের কাজের ওপর থেকে কসিমার নিয়ন্ত্রণ কমে আসে। তাঁর মৃত্যুর পরে, ওয়াগনারের সুরগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অপেরা হাউস *পার্সিফাল* সহ অন্যান্য ওয়াগনারীয় কাজগুলো পরিবেশন করতে শুরু করে।

এর ফলে কসিমার অনুসারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়, কারণ তাঁরা চেয়েছিলেন বায়ারয়েথের বাইরে যেন *পার্সিফাল* পরিবেশিত না হয়।

এই বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ওয়াগনারের “অ্যান্টিসেমিটিজম” বা ইহুদিবিদ্বেষ। ওয়াগনারের লেখায় ইহুদিদের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে, যা তাঁর কাজের সমালোচনা করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এই কারণে, ইসরায়েলে ওয়াগনারের সঙ্গীত পরিবেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বর্তমানে, ইংল্যান্ডের গ্লাইন্ডবোর্ন এবং লংবোরো উৎসবে ওয়াগনারের অপেরা *পার্সিফাল* এবং *ভ্যানফ্রায়েড* পরিবেশিত হচ্ছে।

গ্লাইন্ডবোর্নে *পার্সিফাল* পরিবেশনার মাধ্যমে, ওয়াগনারের কাজের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে চলেছে। অন্যদিকে, লংবোরো উৎসবে *ভ্যানফ্রায়েড* উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা ওয়াগনারের জীবন এবং তাঁর কাজের বিতর্কিত দিকগুলো নিয়ে নতুন করে আলোকপাত করে।

*ভ্যানফ্রায়েড* অপেরাটি ওয়াগনার পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে। এই অপেরায় ওয়াগনারের ইহুদিবিদ্বেষ এবং তাঁর পরিবারের বিতর্কিত দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

অপেরার পরিচালক আভনার ডরম্যান ওয়াগনারের সঙ্গীতের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা এবং সেই সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িত বিদ্বেষপূর্ণ আদর্শের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন।

ওয়াগনারের কাজগুলো আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করে। তাঁর সৃষ্টিশীলতা, সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগের কারণে, তিনি অমর হয়ে আছেন।

তবে, তাঁর বিতর্কিত ব্যক্তিগত জীবন এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁর উত্তরাধিকারকে জটিল করে তুলেছে। *পার্সিফাল* এবং *ভ্যানফ্রায়েড*-এর মতো পরিবেশনাগুলো ওয়াগনারের জটিল উত্তরাধিকারকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

ওয়াগনারের কাজগুলোর আবেদন আজও বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান। তাঁর সঙ্গীত, তাঁর ভাবনা, এবং তাঁর বিতর্কিত জীবন—এসবই আমাদের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *