নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী বায়রু!

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রুর বিরুদ্ধে একটি ক্যাথলিক স্কুলে কয়েক দশক ধরে চলা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তিনি ফরাসি পার্লামেন্টের একটি তদন্ত কমিটির কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বায়ারুর সন্তানরা এই স্কুলে পড়াশোনা করত।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তিনি কিছুই লুকাননি এবং বিরোধীরা রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এই ঘটনাকে ব্যবহার করছে।

প্যারিসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে বায়ারু বলেন, “এটা সত্য-মিথ্যার বিষয় নয়, বরং ধ্বংসের চেষ্টা।” বায়ারু দীর্ঘদিন ধরে নটর-ডেম দে বেথারাম নামক একটি বেসরকারি ক্যাথলিক স্কুলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

এই স্কুলে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তদন্তের জন্য ফ্রান্সের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

২০১৪ সাল থেকে বায়ারু পাও শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পাঁচ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি এই পদে বহাল আছেন। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে ওই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন এবং ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সাল থেকে ওই স্কুলে নির্যাতনের অভিযোগে ২০০-র বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। ভুক্তভোগীদের একটি দলের মুখপাত্র অ্যালাইন এসকার জানান, অভিযোগের মধ্যে যাজকদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন নির্যাতনের ঘটনাও রয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বায়ারু নাকি পার্লামেন্টে মিথ্যা বলেছেন, যা ফরাসি আইনে গুরুতর অপরাধ। ফেব্রুয়ারিতে তিনি আইনপ্রণেতাদের বলেছিলেন যে স্কুলের ‘সহিংসতা বা যৌন নির্যাতনের’ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তবে কয়েক দিন পরেই তিনি স্বীকার করেন যে, ১৯৯৬ সালে একটি চড় মারার ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন এবং সেই সময় এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বায়ারু দাবি করেছেন, তিনি স্থানীয় খবরের কাগজ থেকে যৌন নির্যাতনের কথা জানতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বিচারক ও তদন্তকারীরা সবকিছু গোপন রেখেছিলেন।

তাঁর বক্তব্যের পরিবর্তনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বায়ারু বলেন, “আমার বক্তব্য পরিবর্তন হয়নি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাছে পত্রিকার বাইরে কোনো তথ্য ছিল না।

তদন্ত কমিটি প্রাক্তন শিক্ষিকা ফ্রঁসোয়া গুলুং-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গুলুং দাবি করেছিলেন, তিনি বায়ারু এবং তাঁর স্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন।

বায়ারু বলেছেন, “মাদাম গুলুং আমাকে কিছুই বলেননি। তাঁর দাবি মিথ্যা।”

আদালতের নথিপত্র অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে ফাদার কারিকার্ত নামে স্কুলের এক প্রাক্তন পরিচালককে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

বায়ারু প্রথমে এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করলেও পরে জানান, ঘটনাচক্রে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কারিকার্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রাথমিক অভিযোগ আনা হয়েছিল, কিন্তু বিচারের আগেই তিনি আত্মহত্যা করেন।

এই ঘটনাটি বায়ারুর জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়েও গভীর প্রভাব ফেলেছে। বায়ারুর বড় মেয়ে হেলেন পারলান্ট জানিয়েছেন, তিনি নিজেও নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এক গ্রীষ্মকালীন শিবিরে এক যাজক তাঁকে মারধর করেছিলেন যখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর।

বর্তমানে ৫৩ বছর বয়সী পারলান্ট বলেছেন, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইতে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানানোর আগে, ৩০ বছর ধরে এ বিষয়ে তিনি কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

ভুক্তভোগীদের মুখপাত্র এসকার, যিনি নিজেও ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং নির্যাতনের শিকার, মার্চ মাসে তদন্ত কমিটিকে বলেছিলেন, “সেটা ছিল আতঙ্কের সময় এবং কেউ ভাবতে পারেনি যে আমরা এমন যাজকদের হাতে ছিলাম, যারা আমাদের ওপর অত্যাচার করত।”

এসকার আরও বলেন, “আমার হাতে নামের একটি তালিকা রয়েছে, যেখানে গত ৭০ বছরে অভিযুক্ত সকল যাজকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এখনও অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন, যাঁরা ধীরে ধীরে অভিযোগ জানাতে আসছেন।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *