কান-এর লাল কার্পেট থেকে অভিনেতা বহিষ্কার! তোলপাড় সিনেমাজগতে

কান চলচ্চিত্র উৎসবে (Cannes Film Festival) এক ফরাসি অভিনেতাকে লাল কার্পেটে (red carpet) প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অভিনেতা থিও নাভারো-মুসি’র (Theo Navarro-Mussy) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জানা গেছে, নাভারো-মুসি’র বিরুদ্ধে ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে তার তিনজন প্রাক্তন সঙ্গী ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন। যদিও প্রমাণাভাবে গত মাসে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।

ফরাসি ম্যাগাজিন ‘টেলিরামা’র (Télérama) খবর অনুযায়ী, ওই তিন নারী আদালতের কাছে আপিল করার এবং দেওয়ানি মামলা দায়ের করার পরিকল্পনা করছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক থিয়েরি ফ্রেমো (Thierry Frémaux) টেলিরামাকে নিশ্চিত করেছেন যে, নাভারো-মুসি’কে আপিলের কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে।

যদিও নাভারো-মুসি’র আইনজীবী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। ফ্রেমো’র মতে, “বিষয়টির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, প্রক্রিয়া চলছে।”

এই ঘটনার মাধ্যমে কান চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষের একটি কঠোর বার্তা স্পষ্ট হয়েছে। কোনো অভিনেতা বা পরিচালক, যিনি যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত বা বর্তমানে যার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাদের উৎসবে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হবে।

এই সিদ্ধান্ত ফ্রান্সের ‘সেজার অ্যাওয়ার্ডস’-এর (César Awards) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। উল্লেখ্য, সেজার অ্যাওয়ার্ডস হলো ফ্রান্সের অস্কারের সমতুল্য, যেখানে যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত বা অভিযুক্তদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়।

নাভারো-মুসি’র বয়স ৩৪ বছর। তিনি ফরাসি মেডিকেল ড্রামা ‘হিপোক্রেট’-এ (Hippocrate) অভিনয় করে পরিচিতি লাভ করেন।

যদিও তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে উৎসব কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি টেলিরামাকে জানান যে, তিনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে সম্মান করেন।

নাভারো-মুসি’র আইনজীবী জানিয়েছেন, তাকে এখনো পর্যন্ত আপিলের বিষয়ে কোনো খবর জানানো হয়নি।

অন্যদিকে, ‘ডোসিয়ার ১৩৭’ (Dossier 137) নামক চলচ্চিত্রে নাভারো-মুসি’র পরিচালক ডমিনিক মোল (Dominik Moll) জানিয়েছেন, অভিনেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি আগে কিছু জানতেন না। এমনকি চলচ্চিত্রের শুটিং চলাকালীন সময়েও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

মোল এর আগের একটি পুরস্কারজয়ী সিনেমা নারীদের প্রতি সহিংসতার বিষয় নিয়ে তৈরি করেছিলেন। তিনি এই বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল বলেও উল্লেখ করেন।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অনেকে মনে করছেন, ফরাসি চলচ্চিত্র জগতে #MeToo আন্দোলনের (Me Too movement) প্রভাব এখনো বিদ্যমান। এর আগে, অভিনেতা জেরার্ড দেপার্দিয়ুকে (Gérard Depardieu) ২০২১ সালে দুটি নারীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

দেপার্দিয়ু ২০০টির বেশি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছেন।

এই ঘটনার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে যৌন নিপীড়ন এবং অভিনেতাদের সম্মান রক্ষার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *