ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি প্রায়শই একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, তার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হচ্ছেন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী ইঙ্গিত করে যে, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক – উভয় ক্ষেত্রেই তার প্রভাব বিস্তারের পথে বাধা রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটা বিস্তৃত, তা নিয়ে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। ট্রাম্প প্রায়ই এমন এক শক্তিশালী নেতার ভাবমূর্তি তৈরি করেন, যিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কথা ধরা যাক। ট্রাম্প যখন চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন, তখন শি জিনপিং তার বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন। এর ফলস্বরূপ, ট্রাম্পকে তার প্রস্তাবিত শুল্কের হার কমাতে বাধ্য হতে হয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ট্রাম্পের একচ্ছত্র আধিপত্য সব সময় বজায় থাকে না।
এছাড়াও, অন্যান্য দেশের নেতারাও ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, যিনি নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করে জয়লাভ করেছিলেন, তিনিও ট্রাম্পের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রত্যাশা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং তার প্রতিপক্ষদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তবে, আদালত এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো তার ক্ষমতাকে সীমিত করার চেষ্টা করছে।
আর্থিক দিক থেকেও ট্রাম্পের নীতিগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে, যা ভোক্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ। এমনকি ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ কোম্পানিও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বাধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার “বিগ, বিউটিফুল বিল”-এর (বড়, সুন্দর বিল) মাধ্যমে কর হ্রাস, জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, এই বিলের কিছু অংশে সরকারি ব্যয় কমানোর প্রস্তাব রয়েছে, যা সম্ভবত তার কিছু সমর্থকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিনেটে এই বিলটি পাস করানো কঠিন হতে পারে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্ট। তিনি হয়তো একজন শক্তিশালী নেতা, কিন্তু তার সব ইচ্ছাই পূরণ হবে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই তাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বৈদেশিক নীতিতেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন