ভেনিচের আন্ডারগ্রাউন্ড সঙ্গীত জগতে এক শোকের ছায়া, আর সেই শোকের আগুনে নতুন করে জেগে উঠেছে প্রতিরোধের স্পৃহা। ইতালির এই শহরে, যেখানে সংকীর্ণ গলি আর কালের সাক্ষী পুরনো বাড়িগুলো আজও টিকে আছে, সেখানে এক তরুণ সঙ্গীতশিল্পী ও সমাজকর্মী জিয়াকোমো “জ্যাক” গবাত্তোর হত্যাকাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো শহরকে।
সেপ্টেম্বরে এক ছিনতাইকারীর হামলায় নিহত হন তিনি। জ্যাক ছিলেন সঙ্গীতের একনিষ্ঠ অনুরাগী এবং সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল একজন মানুষ।
তিনি শুধু গান গাইতেন না, বরং সমাজের খারাপ দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সবসময় প্রস্তুত থাকতেন। শহরের একটি পরিত্যক্ত কারখানায় (Centro Sociale Rivolta) তিনি আশ্রয়হীন মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন এবং তাদের পাশে দাঁড়াতেন। তাঁর এই কাজের জন্য তিনি সবার কাছে প্রিয় ছিলেন।
জ্যাকের মৃত্যুর পর, তাঁর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে এবং সমাজের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানাতে বন্ধুরা একত্রিত হয়ে “ভেনেজিয়া হার্ডকোর” নামে একটি সঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করতে চলেছেন।
আগামী ১৬ ও ১৭ই মে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিল্পীরা তাঁদের পরিবেশনা দিয়ে জ্যাককে স্মরণ করবেন। উৎসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাইভবম্ব, জাপানের ভায়োলেন্ট ম্যাজিক অর্কেস্ট্রা এবং ইতালীয় ব্যান্ড দলেরা অংশগ্রহণ করবে।
এই উৎসব শুধু একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান নয়, এটি প্রতিরোধের একটি প্রতীক। উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, জ্যাকের স্বপ্ন ছিল একটি সুন্দর সমাজ গড়ার। তাঁর সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতেই এই উৎসবের আয়োজন।
উৎসবের মাধ্যমে তাঁরা সমাজের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরতে চান এবং মাদকাসক্তি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে চান।
জ্যাকের মৃত্যুর পর, তাঁর বন্ধুরা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা একত্রিত হয়ে শহরের রাস্তায় বিশাল মিছিল করেন। তাঁদের হাতে ছিল জ্যাকের ছবি সংবলিত ব্যানার, যা শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পরেছিল।
এই মিছিলে দশ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল, যা ভেনিসের ইতিহাসে এক বিরল দৃশ্য। এই ঘটনার মাধ্যমে ভেনিসের মানুষ বুঝিয়ে দেয় যে, তারা তাঁদের প্রিয় মানুষকে ভোলেনি এবং সমাজের খারাপ দিকগুলোর বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
জ্যাকের বন্ধু এবং সহকর্মীরা তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁরা একটি স্বল্প খরচে পেশাদার রেকর্ডিং স্টুডিও তৈরি করেছেন, যেখানে তরুণ শিল্পীরা তাঁদের গান রেকর্ড করতে পারবে। এছাড়াও, তাঁরা পথশিশুদের জন্য শীতকালে গরম জামাকাপড় ও খাবারের ব্যবস্থা করেন।
তাঁদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, জ্যাকের আদর্শ আজও তাঁদের মধ্যে বেঁচে আছে। জ্যাকের চলে যাওয়া হয়তো একটি বিশাল ক্ষতি, কিন্তু তাঁর স্মৃতি আজও ভেনিসের তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে গেঁথে আছে।
তাঁর মৃত্যু, প্রতিরোধের এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে, যা সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। “ভেনেজিয়া হার্ডকোর” উৎসব, জ্যাকের প্রতি উৎসর্গীকৃত, প্রতিরোধের এই নতুন পথের এক উজ্জ্বল মাইলফলক হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান