পর্তুগালে ফের ভোটের দামামা, দুর্নীতিতে জর্জরিত দেশের ভবিষ্যৎ কী?

পর্তুগালে রাজনৈতিক অস্থিরতা: আসন্ন নির্বাচনে দুর্নীতি এবং অভিবাসন প্রধান ইস্যু।

লিসবন, পর্তুগাল – আগামী ১৮ই মে পর্তুগালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা স্থিতিশীলতার পরিবর্তে অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই নির্বাচনের মূল কারণ হলো, দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন।

পর্তুগালের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান খরচ, আবাসন সংকট, স্বাস্থ্য খাতের ভবিষ্যৎ এবং অভিবাসন সমস্যা।

এছাড়াও, দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই, যা নির্বাচনের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনিগ্রোর নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (PSD)-র সরকার গত মার্চ মাসে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হেরে যায়।

এর আগে, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে আরেকটি সরকারও ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল।

পর্তুগালের প্রায় এক কোটি ভোটার এখন নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন করবেন, যেখানে ২৩0টি আসনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারে, সেক্ষেত্রে জোট সরকার অথবা অন্য দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচনে প্রধান দলগুলোর মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (PSD), সোস্যালিস্ট পার্টি (PS) এবং কট্টর-ডানপন্থী দল চেগা (Chega)। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে, মন্টেনিগ্রোর দল প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে, যেখানে সোস্যালিস্ট পার্টি ২৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

এছাড়া চেগা পার্টি ১৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্টেনিগ্রোর সংক্ষিপ্ত সরকার পরিচালনাকালে তার বিরুদ্ধে একটি পরামর্শক সংস্থা ‘স্পিনুমভিভা’ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগ ছিল, তিনি এই সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। যদিও মন্টেনিগ্রো দাবি করেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তার শেয়ার স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন।

তবে বিরোধীরা বলছেন, পর্তুগিজ আইনে তিনি এখনও এই কোম্পানির সুবিধাভোগী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পর্তুগালে দুর্নীতির ধারণা বেশ পুরোনো, তবে এটি ভোটারদের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

অনেকে মনে করেন, ‘স্পিনুমভিভা’ কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও মন্টেনিগ্রোর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যদিকে, অভিবাসন বিষয়টিও এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পর্তুগালে অভিবাসন নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে, বিশেষ করে ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি শ্রমিকদের আগমন নিয়ে।

অভিবাসন বিরোধী দলগুলো এই ইস্যুতে জনমতকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে।

আবাসন সংকটও একটি বড় সমস্যা।

২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পর্তুগালে বাড়ির দাম ১০৬ শতাংশ বেড়েছে, যা তরুণ এবং পেশাজীবীদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

এছাড়া, জীবনযাত্রার অন্যান্য খরচও বেড়েছে, যা জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা, তা বলা কঠিন।

সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে দলগুলোকে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জোট করতে হতে পারে অথবা সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার গঠন করতে হতে পারে।

পর্তুগালের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভিনসেন্ট ভ্যালেন্তিম মনে করেন, “আমরা এখন একটি নতুন রাজনৈতিক ধারায় প্রবেশ করছি, যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি তাদের অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে।”

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *