আলোচনায় বসছে রাশিয়া-ইউক্রেন! শান্তির সম্ভবনা কতটুকু?

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন বছর পর আবার শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে দুই দেশের প্রতিনিধিরা শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।

তবে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, এই আলোচনা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো ফল নাও আসতে পারে। খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি।

বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ। অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনা সভায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি।

আলোচনার প্রাক্কালে, উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ দেখা গেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাইলেও, পুতিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এছাড়া, দুই দেশই আলোচনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন শহরে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শান্তি আলোচনার জন্য উভয়পক্ষের কূটনৈতিক তৎপরতা এখনো পর্যন্ত খুব একটা জোরালো নয়।

যুদ্ধ বন্ধের শর্ত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের সমাধানে তাঁর এবং পুতিনের মধ্যে সরাসরি বৈঠক করা জরুরি।

ট্রাম্প আরও জানান, তিনি খুব দ্রুতই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান।

এদিকে, ইউক্রেন একটি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে, তবে রাশিয়া এখনো পর্যন্ত তাদের শর্তের কারণে সেই প্রস্তাব কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে।

সংবাদ সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেন সরকার ও পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া নতুন করে সামরিক অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রাশিয়ার আক্রমণে এ পর্যন্ত ১২,০০০ এর বেশি ইউক্রেনীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এছাড়া, দেশটির অনেক শহর ও গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের ধারণা, এই যুদ্ধে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা এবং সম্ভবত আরও বেশি রুশ সৈন্য নিহত হয়েছে।

শুক্রবার ভোরে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুপিয়ানস্কে ড্রোন হামলায় একজন ৫৫ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও চারজন আহত হয়েছেন। আহত সবাই একটি পৌর প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে রাজি হলেও, রুশ প্রেসিডেন্টের সাড়া না পাওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জেলেনস্কি মনে করেন, রাশিয়া আলোচনার জন্য একটি দুর্বল প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়ে আন্তরিক নয়।

তবে, জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবারের বৈঠকে পাঠাচ্ছেন। কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা এখনো চলমান।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, রুশ প্রতিনিধি দলে আরও তিনজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা রয়েছেন। পুতিন এই আলোচনার জন্য আরও চারজন নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

বৈঠকের আগে, ইস্তাম্বুলে কূটনৈতিক তৎপরতা বেশ বেড়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আলোচনার আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেইথ কেলগ। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রুস্তেম উমেরভ এবং প্রেসিডেন্টের অফিসের প্রধান আন্দ্রেই ইয়েরমাক।

এছাড়াও, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং কেইথ কেলগ।

মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্টালিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইস্তাম্বুলে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না।

তিনি আরও যোগ করেন, “আমার মনে হয়, এখন পর্যন্ত এটা স্পষ্ট যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক মানদণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার ইউরোপের ৪৭টি দেশের নেতাদের সঙ্গে মিলিত হতে আলবেনিয়া গেছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *