ট্রাম্পের আরব সফর: বিলাসবহুল জীবন ও ৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির খবর

শিরোনাম: মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের সফর: ঐশ্বর্য, বাণিজ্য চুক্তি এবং বিতর্ক

ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র – প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় আন্তর্জাতিক সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (United Arab Emirates)-এ গিয়েছিলেন।

এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের একটি রূপরেখা তৈরি করা, যা মূল্যবোধের পরিবর্তে বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। ট্রাম্পের এই সফরকালে বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী শাসকদের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়।

চার দিনের এই সফরে ট্রাম্পের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক ছিল, যা বিভিন্ন দেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সময়ে গাজা ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সংঘাতের বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।

ট্রাম্প অবশ্য জোর দিয়েছিলেন যে, তিনি এই অঞ্চলে আমেরিকার ‘হস্তক্ষেপের’ দিন শেষ করতে চান। এর অংশ হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো সিরিয়ার নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

ট্রাম্পের এই সফরের কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো:

  • গভীর ঐশ্বর্যের প্রতি মুগ্ধতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে নীরবতা: মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরে সাধারণত মানবাধিকারের উন্নতির জন্য স্বৈরশাসকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

কিন্তু ট্রাম্প এক্ষেত্রে নীরব ছিলেন। তিনি বরং উপসাগরীয় অঞ্চলের শাসকদের সঙ্গে তার ব্যবসায়িক চুক্তিগুলো উদযাপন করেছেন এবং তাদের সম্পদের প্রশংসা করেছেন।

তিনি বিভিন্ন দেশের শাসকদের প্রাসাদ পরিদর্শন করেন এবং সেগুলোকে ‘নিখুঁত’ ও ‘কঠিন ক্রয়যোগ্য’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া, সৌদি আরবের আকাশ পথের ‘উজ্জ্বল দৃশ্য’ এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয় বিমান বহরের প্রশংসা করেন।

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক: ট্রাম্প যখন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনা এড়িয়ে যান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

ট্রাম্প পুতিন ও জেলেনস্কিকে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন। কিন্তু পুতিন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচনা এড়িয়ে যান এবং সেখানে নিজের প্রতিনিধিদের পাঠান।

এ বিষয়ে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি না তারা মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কিছু হবে, তবে আমাদের এর সমাধান করতে হবে, কারণ অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।’

সিরিয়া নিয়ে নীতি পরিবর্তন: সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন ছিল না।

কিন্তু মার্চের শুরুতে দেশটিতে সংঘর্ষ হয়, যাতে বহু মানুষ নিহত হয়। এরপর ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন এবং দেশটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হন।

বিনিয়োগের হিসাব নিয়ে বিভ্রান্তি: সফরকালে ট্রাম্প বিভিন্ন সময়ে অতি-সরলীকরণ ও অতিরঞ্জিত মন্তব্য করেছেন।

তিনি একবার বলেছিলেন, এই সফরে ‘আমাদের দেশের জন্য ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ’ এসেছে। যদিও এই অঙ্কটি ছিল সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্মিলিত জিডিপির দ্বিগুণেরও বেশি।

ফলে এই বিনিয়োগগুলো কয়েক বছর ধরে হতে পারে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রভাব নাও ফেলতে পারে।

দ্বন্দ্বগুলির সমাধান হয়নি: ট্রাম্পের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদার করা।

এছাড়া গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানেও তিনি কিছু পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

ট্রাম্প উভয় সংঘাতের বিষয়ে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি। বরং তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি যদি ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হতেন, তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

নৈতিকতার প্রশ্ন: মধ্যপ্রাচ্যে সফরের সময় ট্রাম্পের পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া, কাতারের কাছ থেকে ট্রাম্প যে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাসবহুল বিমান গ্রহণ করেছেন, তা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্পের এই সফরকালে তার পরিবারের বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

আবুধাবির একটি সরকারি বিনিয়োগ কোম্পানি ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

এছাড়াও, ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে রিয়েল এস্টেট প্রকল্প তৈরি, ট্রাম্প টাওয়ার ও গলফ কোর্স নির্মাণের জন্য তাদের ব্র্যান্ড ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *