ভয়ঙ্কর! শুল্কের কারণে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম, মাথায় হাত!

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি: শুল্কের কারণে বাড়ছে পণ্যের দাম, উদ্বেগে বিশ্ব অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে আমদানি শুল্কের (Tariffs) কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও এর একটি গুরুতর প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে।

সম্প্রতি, এই উদ্বেগের বিষয়টি আরও জোরালো হয়েছে, যখন বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট ঘোষণা করেছে যে তারা শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে, কারণ বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তন তাদের বাণিজ্য এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডগ ম্যাকমিলন জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায়, এমনকি এই সপ্তাহে ঘোষিত হ্রাসকৃত হারেও, আমরা সব চাপ শুষে নিতে পারছি না।” ওয়ালমার্টের এই ঘোষণার কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদেরকে বাইরে থেকে পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক দিতে হয়, যা প্রকারান্তরে একটি কর।

এই শুল্কের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ে, যা তাদের বিক্রি মূল্যে প্রতিফলিত হয়। ওয়ালমার্টের মতো একটি বিশাল কোম্পানির এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা।

শুধু ওয়ালমার্টই নয়, অর্থনৈতিক অনেক সূচকও একই ইঙ্গিত দিচ্ছে। উৎপাদন মূল্য সূচক (Producer Price Index বা PPI) অনুযায়ী, পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। যদিও শুরুতে এই সূচক কিছুটা কমেছিল, তবে এর কারণ ছিল মূলত সরবরাহকারীদের মুনাফার পরিমাণ কমানো।

এর মানে হলো, ব্যবসায়ীরা শুল্কের কারণে বেড়ে যাওয়া খরচ তাদের মুনাফা থেকে মেটাচ্ছেন। ভোক্তারাও এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

আর্থিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোক্তারা যেহেতু শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন, তাই তারা তাদের কেনাকাটা সীমিত করছেন। এর ফলে বাজারে চাহিদা কমে যাচ্ছে।

অর্থনীতির এই দিকটি বিভিন্ন ডেটার মাধ্যমে যাচাই করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, এপ্রিল মাসের ভোক্তা ব্যয়ের হিসাব সামান্য বেড়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ০.১ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, জেমি ডিমন, আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত মন্দা থেকে মুক্তি পাবে না। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ার, জেরোম পাওয়েল, সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও অস্থিরতা এবং মূল্যের ওঠা-নামা বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য তাদের কাজ করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

অবশ্য, এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে দাম কমছে। যেমন ডিম এবং বিমানের টিকিটের দাম কমেছে। তবে এর কারণ হলো চাহিদা কমে যাওয়া।

মানুষের আয় কমে গেলে তারা ভ্রমণ বা বিনোদনে কম অর্থ খরচ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির যেকোনো পরিবর্তন বাংলাদেশের বাণিজ্য, আমদানি ও রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলে।

বিশেষ করে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ে, তবে তা বিশ্বজুড়ে পণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারেও আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলবে।

ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই অনিশ্চয়তা আরও কিছুদিন চলতে পারে। আগামী দিনগুলোতে আরও কিছু ডেটা প্রকাশিত হবে, যা অর্থনীতির এই পরিস্থিতির আরও বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *