শিরোনাম: মার্কিন সামরিক বাহিনীর পরিবারগুলোতে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে জটিলতা, বাড়ছে দুশ্চিন্তা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিবারের স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা প্রদানে গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে চিকিৎসা খরচ পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় হাজারো পরিবার চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সামরিক বাহিনীর সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য, স্পিচ থেরাপি, শারীরিক চিকিৎসা এবং অটিজম-এর মতো বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা গ্রহণকারীরা।
নতুন এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, তেমনই চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে আর্থিক চাপ বাড়ছে ভুক্তভোগীদের উপর।
সামরিক বাহিনীর সদস্যদের স্বাস্থ্য বীমা প্রদানকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম হলো ‘ট্রাইকেয়ার’। এই প্রোগ্রামের অধীনে থাকা রোগীদের চিকিৎসা খরচ পরিশোধের দায়িত্বে থাকা দুটি প্রধান অঞ্চলের মধ্যে একটি হলো ‘ওয়েস্ট’।
এখানে নতুন ঠিকাদার হিসেবে এসেছে ‘ট্রাইওয়েস্ট হেলথকেয়ার অ্যালায়েন্স’। অপর অঞ্চল ‘ইস্ট’-এ ‘হিউম্যানা মিলিটারি’ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এখনো দায়িত্বে বহাল আছে, তবে তাদেরও ক্লেন পরিশোধে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জানুয়ারী মাস থেকে তাঁরা নিয়মিতভাবে বকেয়া পরিশোধ পাচ্ছেন না।
এর ফলে অনেক চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিষেবা কমিয়ে দিতে হয়েছে অথবা পুরোপুরি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
রোগীদের অভিযোগ, তাঁরা এখন জানতে পারছেন না যে তাঁদের পরিচিত চিকিৎসকেরা এখনো এই নেটওয়ার্কে আছেন কিনা, অথবা তাঁদের চিকিৎসার খরচ বীমার আওতায় আসবে কিনা।
ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা ডেনিসের (প্রকৃত নাম গোপন রাখা হয়েছে) ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নিয়মিতভাবে তাঁর থেরাপিস্টের কাছে কাউন্সেলিংয়ের জন্য যেতেন।
কিন্তু ট্রাইকেয়ারের পক্ষ থেকে পরিশোধ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এখন তাঁকে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হচ্ছে।
আগে যেখানে তাঁর সেশন ফি ছিল প্রায় ৫০ মার্কিন ডলার, এখন তা বেড়ে হয়েছে ২০০ মার্কিন ডলার।
এই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে না পারায় তিনি মানসিক উদ্বেগে ভুগছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ট্রাইকেয়ারের পক্ষ থেকে সময় মতো অর্থ পরিশোধ না করার কারণে অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এর ফলে রোগীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়ছে এবং চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
টেক্সাসের একটি অটিজম চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিচালক এলিজাবেথ ব্রাউন-মিলার জানিয়েছেন, বকেয়া পরিশোধের জটিলতার কারণে তিনি তাঁর কেন্দ্রটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ট্রাইকেয়ারের পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে অনেক রোগী এবং চিকিৎসক এখনো তাঁদের বকেয়া পরিশোধ পাননি।
বিষয়টি নিয়ে সামরিক বাহিনীর পরিবারগুলোতে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সমস্যা আগে-পরে দেখা গেলেও, এবারের পরিস্থিতি নজিরবিহীন।
তাঁদের মতে, স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা নিয়ে এমন সঙ্কট সামরিক পরিবারগুলোর মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
তথ্যসূত্র: CNN