যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শহর এবং সাহায্যকারী খ্রিস্টান সংস্থাগুলোর উদ্বেগের কারণ: ট্রাম্পের নীতিমালায় আফগান শরণার্থীদের সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কিছু নীতি। বিশেষ করে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের জন্য সরকারি সাহায্য কমানোর ফলে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভার্জিনিয়ার ফ্রেডারিকসবার্গ শহরে বসবাস করা অনেক আফগান শরণার্থী এবং তাদের সহায়তাকারী সংস্থাগুলো এখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন।
ফ্রেডারিকসবার্গ শহরটি ওয়াশিংটন ডিসি’র কাছাকাছি অবস্থিত, যেখানে অনেক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এখানকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আফগান শরণার্থীদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এই শহরে বসবাস করা অনেক আফগান পরিবার এখনো তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য অপেক্ষা করছে, যারা তাদের সঙ্গে মিলিত হতে চায়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির কারণে তাদের সেই আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।
আফগান শরণার্থীদের পুনর্বাসনে স্থানীয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা শরণার্থীদের ঘর তৈরি, খাবার সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে সাহায্য করে। এখানকার সেন্ট মেরি’স চার্চের মতো বিভিন্ন গির্জার স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই সাহায্যগুলো শরণার্থীদের নতুন জীবন শুরু করতে সহায়ক হয়েছে। স্থানীয় একটি ব্যাপটিস্ট চার্চ, পিলারের সদস্যরাও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা ইংরেজি শেখার ক্লাস পরিচালনা করে এবং তাদের প্রয়োজনে সাহায্য করে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতির কারণে এই সহায়তা কার্যক্রম এখন হুমকির মুখে। সরকারি সাহায্য কমে যাওয়ায় স্থানীয় সংস্থাগুলোকে কর্মী ছাঁটাই করতে হচ্ছে অথবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এর ফলে শরণার্থীদের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, যারা একসময় মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সাহায্য করেছিল, তাদের মধ্যে অনেকে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় ক্যাথলিক চ্যারিটি সংস্থাগুলো শরণার্থীদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। তারা ভিয়েতনাম থেকে আসা শরণার্থীদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে, গত দশ বছর ধরে আফগান শরণার্থীদের সাহায্য করে আসছে। ২০১৯ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর অনেক আফগান শরণার্থী এখানে এসে আশ্রয় নেয়। এই সংস্থাগুলো এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সরকারি সাহায্য কমে যাওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
আফগান শরণার্থী সুরাইয়া কাদিরি জানান, তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, তখন ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে তার যাত্রা বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সৌভাগ্যবশত, তিনি শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে নারীদের অধিকারের ওপর তালেবানের কঠোরতা ছিল ‘পৃথিবীর শেষ’ হওয়ার মতো।
ফ্রেডারিকসবার্গে ক্যাথলিক চ্যারিটি অফিসের কর্মীরা বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে। এখানে মুসলমান কর্মচারী ও ক্লায়েন্টও রয়েছেন। এই সংস্থাগুলো শরণার্থীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আফগান শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মীয় ও অরাজনৈতিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা মনে করে, শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব। শরণার্থীদের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া একটি মহৎ কাজ।
তথ্য সূত্র: