ঘুমের প্রয়োজনীয়তা: বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার ঘুমের ধরনে পরিবর্তন আসে
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অপরিহার্য।
সাধারণভাবে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের ধরনে কিছু পরিবর্তন আসে।
ঘুমের এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
ঘুমের অভাব হলে বিষণ্ণতা, হৃদরোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই, ঘুমের গুরুত্ব সব বয়সেই সমান।
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়স: মস্তিষ্কের বিকাশে ঘুমের গুরুত্ব
এই বয়সে তরুণরা সাধারণত পড়াশোনা, কর্মজীবন শুরু করা অথবা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এই সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম তাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের অভাবে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে এবং অনেক সময় মন ভুল পথে চালিত হতে পারে। ঘুমের অভাব হলে পড়াশোনার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তাই, এই বয়সে ঘুমের প্রতি বিশেষ নজর রাখা উচিত।
সাধারণত, এই সময়ে ছাত্র-ছাত্রীরা দেরিতে ঘুমানো এবং সকালে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠার একটি চক্রের মধ্যে থাকে, যা ঘুমের ঘাটতি তৈরি করে।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় উদ্বেগ, মানসিক চাপ ও হতাশায় ভুগছেন তরুণরা। তাই, ঘুমের সময়সূচী বজায় রাখা এবং ঘুমের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
২৬ থেকে ৩৯ বছর বয়স: কর্মজীবন ও পরিবারের ভারসাম্য
এই বয়সে কর্মজীবনের চাপ বাড়ে এবং পরিবার গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আসে।
অনেক সময় দেখা যায়, ঘুমের সময় কমিয়ে মানুষ অন্যান্য কাজ করার চেষ্টা করে। তবে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কর্মক্ষেত্রে ভালো ফল করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ঘুমের অভাব কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
এছাড়াও, এই বয়সে সন্তান জন্মদানের কারণে মায়েদের ঘুমের ধরনে পরিবর্তন আসে।
সন্তান জন্মদানের পরে অনেক মায়ের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। তাই, এই সময়ে ঘুমের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
মানসিক চাপ কমাতে এবং ঘুমের ভালো অভ্যাসের জন্য চেষ্টা করা উচিত।
৪০ এর দশক: স্বাস্থ্য এবং ঘুমের সম্পর্ক
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের ধরনে আরও কিছু পরিবর্তন আসে।
এই সময়ে ঘুমের ব্যাধি, যেমন – স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট) দেখা দিতে পারে।
মহিলাদের মেনোপজের (ঋতুস্রাব বন্ধ) সময় ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ঘুমের অভাব শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে মেনোপজের সময় ঘুমের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
মেনোপজের সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই, এই সময়ে ভালো ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ঘুমের সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
৫০ এর দশক এবং তার বেশি বয়স: ঘুমের গুরুত্ব ও স্বাস্থ্য
এই বয়সে মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলো বাড়তে থাকে।
হৃদরোগের ঝুঁকিও এই সময়ে বেশি থাকে। অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব এবং কাজে মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও, বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে একাকীত্ব বাড়তে পারে, যা ঘুমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই বয়সে ঘুমের ভালো মানের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করা উচিত।
সবশেষে, ঘুমের গুরুত্ব জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অপরিসীম।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘুমের ধরনে পরিবর্তন আসলেও, ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কখনোই কমে না।
স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন এবং ঘুমের ভালো অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঘুমের মান উন্নত করতে পারি এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন