নিজেকে ভালোবাসুন! আত্ম-স্বীকৃতি কিভাবে কাজে লাগে?

আত্ম-অনুপ্রেরণা: নিজেকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করার উপায়।

জীবনে চলার পথে আমরা সবাই নানা ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। কখনও ভালো, কখনও বা খারাপ অভিজ্ঞতা আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখাটা খুব জরুরি।

মনোবিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিয়েছেন, যা হলো আত্ম-অনুপ্রেরণা বা সেলফ-এ্যাফারমেশন (Self-affirmation)। আত্ম-অনুপ্রেরণা হলো নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলা, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং মানসিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।

আসলে, আমরা সবাই নিজেদের সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা রাখতে চাই। কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে যখন আমাদের আত্ম-মূল্যায়নে চিড় ধরে, তখন আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। আত্ম-অনুপ্রেরণা এই সময় আমাদের সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারে।

১৯৮০-এর দশকে সমাজ মনোবিজ্ঞানী ক্লদ স্টিল (Claude Steele) এই তত্ত্বের প্রচলন করেন। তাঁর মতে, আত্ম-অনুপ্রেরণার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভেতরের শক্তিকে আরো দৃঢ় করতে পারি।

আত্ম-অনুপ্রেরণা কিভাবে কাজ করে? এটি মূলত আমাদের ভেতরের শক্তিকে জাগ্রত করে। যখন আমরা নিজেদের দুর্বল মনে করি, তখন ইতিবাচক কথা বা বাক্য ব্যবহার করে আমরা নিজেদের উৎসাহিত করতে পারি।

যেমন, “আমি আমার কাজে আত্মবিশ্বাসী”, “আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাবো”, অথবা “আমি একজন ভালো মানুষ”। এই ধরনের কথাগুলো আমাদের মনকে শান্ত করে এবং নতুন করে কাজ শুরু করার অনুপ্রেরণা যোগায়।

আত্ম-অনুপ্রেরণার কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি আমাদের আত্ম-মর্যাদাবোধ বাড়ায়, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের উদ্বেগ কমাতে এবং মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে সহায়তা করে।

নিয়মিত আত্ম-অনুপ্রেরণা চর্চা করলে, আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি এবং নিজেদের সম্পর্কে ভালো অনুভব করতে শুরু করি।

কিভাবে আত্ম-অনুপ্রেরণা তৈরি করবেন? প্রথমে, নিজের সম্পর্কে কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে বের করুন। আপনি কোন বিষয়ে ভালো, আপনার দক্ষতা কি, অথবা আপনার কোন গুণগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে – এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন।

এরপর, সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করে কিছু বাক্য তৈরি করুন। যেমন, যদি আপনি মনে করেন আপনি ভালো লিখতে পারেন, তবে বলতে পারেন, “আমি একজন ভালো লেখক”। বাক্যগুলো সবসময় বর্তমানকালে তৈরি করুন, যেন মনে হয় আপনি ইতিমধ্যেই সেই কাজটি করছেন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি আরো আত্মবিশ্বাসী হতে চান, তবে বলতে পারেন, “আমি আমার ক্ষমতা এবং প্রতিভার উপর বিশ্বাস রাখি”।

আত্ম-অনুপ্রেরণা চর্চা করার কিছু উপায় আছে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক মিনিটের জন্য আত্ম-অনুপ্রেরণার বাক্যগুলো পড়ুন। একটি ডায়েরিতে আপনার কথাগুলো লিখতে পারেন।

এছাড়া, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে উৎসাহিত করতে পারেন। নিয়মিতভাবে এই চর্চা করলে আপনি ধীরে ধীরে এর ফল পেতে শুরু করবেন।

মনে রাখতে হবে, আত্ম-অনুপ্রেরণা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সরাসরি সমাধান নয়। যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগে ভোগেন, তবে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আত্ম-অনুপ্রেরণা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়।

সুতরাং, আত্ম-অনুপ্রেরণা হলো নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার একটি সুন্দর উপায়। নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারি এবং জীবনের কঠিন পরিস্থিতিগুলো মোকাবেলা করতে পারি।

তথ্য সূত্র: Healthline

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *