ডায়েট নিয়ে উন্মাদনা: গ্রিক-রোমান যুগেও ছিল স্বাস্থ্য টিপস!

প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের খাদ্যচর্চা: স্বাস্থ্যকর জীবনের এক ভিন্ন দিগন্ত।

প্রাচীনকালে, যখন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিল না, তখন গ্রিক ও রোমান চিকিৎসকেরা সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্যাভ্যাসকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন। তাদের দেওয়া পরামর্শগুলি শুনলে হয়তো এখনকার আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা শরীরকে সুস্থ রাখতে খাদ্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।

প্রাচীনকালে, চিকিৎসকেরা বিশ্বাস করতেন, মানুষের শরীর “হট, কোল্ড, ওয়েট ও ড্রাই” এই চারটি উপাদানের উপর নির্ভরশীল। শরীরের এই উপাদানগুলোর ভারসাম্য রক্ষার জন্য খাদ্য ও ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হতো।

উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত গরম বা শুষ্ক শরীরের জন্য শীতল ও আর্দ্র খাবার, যেমন – লেটুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো। দ্বিতীয় শতকের রোমান চিকিৎসক গ্যালেন, অতিরিক্ত রেড মিট (গরুর মাংস) খাওয়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন।

এমনকি ওজন কমানোর জন্য খালি পেটে ব্যায়াম করার পরামর্শও দিতেন তারা।

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক হিপোক্রেটিস ওজন কমাতে ব্যায়ামের গুরুত্বের কথা বলেছিলেন। তিনি খালি পেটে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিতেন, যা বর্তমানের ‘ফাস্টিং কার্ডিও’-র ধারণার সঙ্গে মিলে যায়।

এছাড়া, দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারীদের জন্য চিকেন সুপ খাওয়ার পরামর্শ দিতেন তারা।

প্রাচীনকালে খাদ্য নির্বাচন ছিল খুবই ব্যক্তিগত। প্রত্যেকের শরীরের গঠন অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথা বলা হতো।

একজন ক্রীড়াবিদের জন্য যেখানে মাংস ও ভারী খাবার প্রয়োজনীয় ছিল, সেখানে অফিসের কর্মীদের জন্য হালকা খাবার, যেমন – মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো।

তবে, খাদ্যাভ্যাসে দ্রুত পরিবর্তন আনাকে তারা ভালো চোখে দেখতেন না। ধীরে ধীরে খাদ্য ও ব্যায়ামের পরিবর্তন আনার কথা বলা হতো, যা বর্তমানকালের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

তবে, প্রাচীনকালের খাদ্য বিষয়ক সব ধারণা আধুনিক মানুষের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত লবনাক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ বা শরীরে দূষিত পদার্থ বের করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা এখন আর স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় না।

ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখলে, প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের খাদ্যাভ্যাস ছিল স্বাস্থ্যকর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাদের পরামর্শগুলি আজও আমাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে।

তাদের ব্যক্তিগতকৃত খাদ্যাভ্যাসের ধারণা এবং শরীরের উপাদানগুলির ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *