গরম বাড়ার সাথে সাথে খাদ্য বিষক্রিয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, যা একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। দূষিত খাবার খাওয়ার ফলে প্রতি বছর অনেক মানুষ অসুস্থ হয়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এর প্রকোপ বাড়ে। বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই এই বিষয়ে সচেতনতা অপরিহার্য।
খাবার থেকে সৃষ্ট রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলোর মধ্যে ৪টি প্রধান জীবাণু হলো: লিস্টেরিয়া, নরোভাইরাস, সালমোনেলা/ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর এবং ই. কোলাই। এই জীবাণুগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে এবং মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।
**লিস্টেরিয়া:** লিস্টেরিয়া একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া যা ভেজা পরিবেশে, যেমন কারখানার নর্দমায় জন্মায়। এটি খাদ্য বিষক্রিয়ার তৃতীয় প্রধান কারণ। লিস্টেরিয়া সংক্রমণের ফলে মেনিনজাইটিস সহ অন্যান্য মারাত্মক রোগ হতে পারে। গর্ভবতী মহিলা, শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
লিস্টেরিয়ার উৎস: অপাস্তুরিত দুধ, হট ডগ, শুকনো सॉसेज, ধূমপান করা सी फूड এবং সালাদ।
লক্ষণ: জ্বর, বমি বমি ভাব, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, তীব্র মাথাব্যথা এবং খিঁচুনি। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এটি ফ্লুর মতো মনে হতে পারে, যা গর্ভপাত বা মৃত শিশুর জন্ম দিতে পারে।
**নরোভাইরাস:** নরোভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াতে পারে এবং ডায়রিয়া ও বমির মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি খুব সহজেই একজনের শরীর থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারে।
সংক্রমণের বিস্তার: আক্রান্ত ব্যক্তির বমি থেকে নির্গত কণা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
লক্ষণ: পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং জ্বর।
গুরুত্বপূর্ণ দিক: লক্ষণ দেখা যাওয়ার পরেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এটি পরিবেশে সক্রিয় থাকতে পারে।
**সালমোনেলা এবং ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর:** এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত দূষিত বা ভালোভাবে রান্না করা হয়নি এমন খাবার থেকে ছড়ায়। এটি মারাত্মক হতে পারে।
সংক্রমণের উৎস: অসুস্থ পশুদের সংস্পর্শে আসা, দূষিত মাটি, সার বা জল দ্বারা উৎপাদিত কাঁচা সবজি খাওয়া।
লক্ষণ: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, উচ্চ জ্বর এবং কখনও কখনও মলের সাথে রক্ত যাওয়া।
**ই. কোলাই:** ই. কোলাই আমাদের অন্ত্রে স্বাভাবিকভাবে থাকে এবং হজমে সাহায্য করে। তবে কিছু ক্ষতিকর ই. কোলাই (E. coli) সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
সংক্রমণের বিস্তার: অপরিষ্কার হাতে খাবার খাওয়া বা সংক্রমিত পশু বা মানুষের সংস্পর্শে আসা।
লক্ষণ: মারাত্মক ডায়রিয়া, পেট ব্যথা এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া। গুরুতর ক্ষেত্রে, এটি নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং কিডনি বিকল করতে পারে।
খাবার বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত:
- খাবার তৈরির আগে ও পরে ভালোভাবে হাত ধোয়া উচিত।
- খাবার ভালোভাবে রান্না করুন, বিশেষ করে মাংস ও ডিম।
- কাঁচা এবং রান্না করা খাবার আলাদা রাখুন।
- ঘরের তাপমাত্রায় ২ ঘণ্টার বেশি খাবার রাখা উচিত না।
- ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- নিরাপদ জল পান করুন।
- রাস্তার খাবার খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন।
যদি খাদ্য বিষক্রিয়ার গুরুতর লক্ষণ দেখা যায়, যেমন – উচ্চ জ্বর, রক্তযুক্ত ডায়রিয়া, বা ডিহাইড্রেশন, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা সবাই সুস্থ থাকতে পারি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক