আমেরিকার জাতীয় উদ্যানে ভিড় এড়িয়ে জলের গভীরে! কিভাবে?

শিরোনাম: আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক: জলের নীচে লুকিয়ে থাকা জগৎ

আপনি যদি প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন, আর ভিড় এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্কগুলোতে জলের নিচে ডুব দিতে পারেন। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস নামক একটি সংস্থা এইসব পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে, যা আমেরিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই পার্কগুলোতে শুধু যে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করা যায় তা নয়, বরং এখানকার জলের নিচেও রয়েছে অসংখ্য আকর্ষণ। আসুন, তেমনই কিছু পার্কের অজানা জগৎ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১. ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্ক:

ইয়েলোস্টোন লেক আমেরিকার বৃহত্তম আলপাইন লেকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার “মেরি বে”-তে ডুব দিলে মনে হবে যেন “শ্যাম্পেন”-এর বুদবুদের মধ্যে সাঁতার কাটছেন।

লেকের তলদেশ থেকে গরম জলীয় বাষ্প ওঠার কারণে জলের দৃশ্যমানতা কিছুটা কমে যায়, যা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা তৈরি করে। এছাড়া, লেকের “ওয়েস্ট থাম্ব”-এ রয়েছে গরম জলের উৎস, যা অনেকটা “ওল্ড ফেইথফুল”-এর মতো, তবে জলের নিচে!

ডুবুরিদের জন্য এটি একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

২. অলিম্পিক ন্যাশনাল পার্ক:

এই পার্কটি তার সুন্দর সমুদ্রসৈকত, ঘন বনভূমি এবং বরফাবৃত পাহাড়ের জন্য পরিচিত। এখানে লেক ক্রিসেন্টের স্বচ্ছ জলে ডুব দেওয়াটাও অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা।

লেকের গভীরতা ৬০০ ফুটের বেশি, এবং জলের স্বচ্ছতা এত বেশি যে, অনেক সময় ১৫০ ফুটের বেশি পর্যন্ত দেখা যায়।

এছাড়াও, “স্ল্যাজহ্যামার পয়েন্ট”-এর মতো জায়গায় ডুব দিলে এক ভিন্ন জগৎ-এর সন্ধান পাওয়া যায়। যারা সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য “ইস্ট বিচ” এবং “ডেভিল’স পাঞ্চবোল”-এর মতো জায়গাগুলো খুবই উপযোগী।

এখানকার জলে রাতে কায়াকিং করারও সুযোগ রয়েছে, কারণ এখানকার জল “বায়োলুমিনেসেন্ট”, অর্থাৎ অন্ধকারে আলো ছড়ায়।

৩. আইল রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক:

সুপিরিয়র লেকের বিপদসংকুল জলরাশির মাঝে অবস্থিত এই পার্কটি তার ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসাবশেষের জন্য বিখ্যাত। এখানে ডুব দিলে যেন আমেরিকার সমুদ্র ইতিহাসের এক জাদুঘরে প্রবেশ করা যায়।

কাঠের তৈরি পুরোনো স্টিমার থেকে শুরু করে ইস্পাতের মালবাহী জাহাজ পর্যন্ত, বিভিন্ন ধরনের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এখানে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে “এস.এস. আমেরিকা” নামের একটি জাহাজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা এখনো ভালোভাবে সংরক্ষিত আছে।

৪. বিস্কেইন ন্যাশনাল পার্ক:

এই পার্কটি মায়ামি শহরের কাছে অবস্থিত এবং এটি উত্তর আমেরিকার জীবন্ত প্রবাল প্রাচীরের আবাসস্থল। এখানকার সমুদ্রের গভীরে ৬০০ প্রজাতির বেশি সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, ডলফিন সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর বসবাস।

স্বচ্ছ জলে স্নোরকেলিং করার সময় হাঙ্গর, জেলিফিশ, লবস্টার এবং নানা রঙের মাছ দেখা যায়।

ডুবুরিদের জন্য এখানে “স্পঞ্জ ফ্যান্টাসি”-র মতো আকর্ষণীয় জায়গা রয়েছে, যেখানে বিশাল স্পঞ্জ দেখা যায়।

৫. ওজার্ক সিনিক রিভারওয়েজ ও বাফেলো ন্যাশনাল রিভার:

মিসৌরির এই নদীগুলোতে সাঁতার বা স্নোরকেলিং করার সুযোগ রয়েছে। এখানে প্রবাল প্রাচীর বা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ নেই, তবে বনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর শান্ত স্রোতে গা ভাসানো এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

বিশেষ করে শরৎকালে যখন চারপাশের গাছপালা তাদের বর্ণ বদলায়, তখন এখানকার দৃশ্য আরও মনোরম হয়ে ওঠে।

৬. চ্যানেল আইল্যান্ডস ন্যাশনাল পার্ক:

ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের কাছে অবস্থিত এই পার্কটিকে “উত্তর আমেরিকার গ্যালাপাগোস” বলা হয়। এখানকার কেল্প বনগুলি ডুবুরিদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।

জলের নিচে, সূর্যের আলো কেল্প-এর মধ্যে দিয়ে আসার ফলে এক অসাধারণ দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

এখানে গারিবাল্ডি মাছ, হাঙর, অক্টোপাস, सी लायन-এর মতো বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়।

এগুলো ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল পার্কগুলোতে জলের নিচে আরও অনেক সুন্দর জগৎ লুকিয়ে আছে। এই স্থানগুলো একদিকে যেমন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তুলে ধরে, তেমনই পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বও বুঝিয়ে দেয়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *