গ্রীসের জলপাই তেল: স্বাদ নেওয়ার সেরা জায়গাগুলি!

গ্রিসে জলপাই তেলের পর্যটন: স্বাদে ও ঐতিহ্যে মোড়া এক ভ্রমণ।

ভূমধ্যসাগরের দেশ গ্রিস, যেখানে জলপাই গাছ যেন সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। শুধু খাবার হিসাবেই নয়, জলপাই তেল গ্রিসের অর্থনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আর এখন এই জলপাই তেলকে কেন্দ্র করে সেখানে বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। একেই বলা হচ্ছে ‘ওলিওট্যুরিজম’ বা জলপাই তেল বিষয়ক পর্যটন।

গ্রিসের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পেলোপোনিস উপদ্বীপ, এথেন্স এবং ক্রিট ও করফুর মতো দ্বীপগুলোতে এখন জলপাই তেল বিষয়ক ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। পর্যটকেরা এখানে জলপাই বাগান পরিদর্শন করতে পারেন, তেল তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে পারেন এবং বিভিন্ন ধরনের জলপাই তেলের স্বাদ নিতে পারেন।

পেলোপোনিস উপদ্বীপের অলিম্পিয়ার কাছে ‘দ্য অলিভ টেম্পল’-এর কথা ধরা যাক। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে জলপাই বাগান ও মিল পরিদর্শন, সেইসঙ্গে জলপাই গাছের পরিচর্যা, জলপাই তেল তৈরি এবং সাবান বানানোর মতো হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

এই অঞ্চলের কারাবেলাস পরিবার, যারা চতুর্থ প্রজন্মের জলপাই চাষি, তাদের শতবর্ষী গাছে ফলানো হয় ‘সাবিডোলিয়া’ নামের বিশেষ জাতের জলপাই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হলেও, পর্যটন তাদের ব্যবসার জন্য সহায়ক হয়েছে।

তাদের মতে, জলপাই বিষয়ক পর্যটন স্থানীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, পেলোপোনিসের দক্ষিণ-পশ্চিমের মেসেনিয়া অঞ্চলে রয়েছে মনোরম সমুদ্র সৈকত, ট্রেকিংয়ের সুন্দর পথ এবং প্রাচীন মায়াসেনীয় সভ্যতার নিদর্শন।

এখানকার ‘কোরোনেইকি’ জাতের জলপাই শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেও টিকে থাকতে পারে এবং উচ্চ গুণমানের জলপাই তেল সরবরাহ করে।

অক্টোবর মাস থেকে এখানে জলপাই সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়, যখন সবুজ জলপাই থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তেল। এখানকার ‘ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল, কোস্টা নাভারিনো’ হোটেলে আগত পর্যটকদের জন্য জলপাই তেলের স্বাদ গ্রহণের বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে।

এথেন্স থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে, কোরিন্থের কাছে ‘মার্কেলস অলিভ’-এ সারা বছর ধরেই জলপাই তেল সংগ্রহের প্রক্রিয়া দেখা যায়। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমেও এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করা যায়, যা পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তারা ‘মানাকি’ জাতের পরিবর্তে এখন তাপ সহনশীল ‘কোরোনেইকি’ জাতের জলপাই চাষের দিকে ঝুঁকছে।

ক্রিট দ্বীপ, যেখানে গ্রিসের প্রায় অর্ধেক জলপাই তেল উৎপাদিত হয়, সেখানেও পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। এখানকার পাহাড়ী পরিবেশে সহস্র বছরের পুরনো জলপাই গাছগুলোর নিচে, পর্যটকেরা স্থানীয় সংস্কৃতি ও জলপাই তেলের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারেন।

করফু দ্বীপ, যা এক সময় ভ্যাটিকানের জন্য জলপাই তেল সরবরাহ করত, সেখানেও জলপাই তেলের ঐতিহ্য নতুন করে জেগে উঠেছে। এখানকার ‘দ্য গভর্নর’ নামক একটি সংস্থা, যারা অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে জলপাই তেল তৈরি করে, তাদের উৎপাদিত তেলে ‘ওলিওক্যানথাল’ নামক উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যা প্রদাহরোধী হিসেবে পরিচিত।

পর্যটকেরা এখানে তাদের মিল পরিদর্শন করতে পারেন এবং প্রাচীন জলপাই বাগানে ভ্রমণের সুযোগ পান।

জলপাই তেল বিষয়ক পর্যটন গ্রিসের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি একদিকে যেমন স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে, তেমনই পর্যটকদের জন্য এক ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

জলপাই তেল বিষয়ক এই পর্যটন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন ধারণা দিতে পারে, যেখানে আমাদের স্থানীয় কৃষি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানো সম্ভব।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *