মুখে জিহ্বা আটকে রেখে মুখের গড়ন পরিবর্তনের কৌশল ‘মিউইং’ এবং বিতর্ক।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মিউইং’ বেশ পরিচিত একটি শব্দ। এই পদ্ধতিতে মুখের আকৃতি পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়।
দাঁতের পাটি এবং চোয়ালের সঠিক অবস্থানে জিহ্বা রেখে মুখের সৌন্দর্য বাড়ানোই এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্য। তবে এই পদ্ধতির উদ্ভাবক, বিতর্কিত ডেন্টিস্ট মাইক মিউ-কে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা সমালোচনা।
সম্প্রতি, চিকিৎসা সংক্রান্ত ভুল ধারণার জন্য তার ডেন্টাল লাইসেন্সও বাতিল করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কেন্ট এলাকার বাসিন্দা ড. মাইক মিউ একজন অর্থোডন্টিস্ট।
তিনি মুখের গঠন উন্নত করতে ‘মিউইং’ নামক একটি পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
এই পদ্ধতিতে মুখের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখার উপর জোর দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে চোয়ালের হাড় সুগঠিত হয় এবং মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় বলে তিনি দাবি করেন।
মিউ-এর মতে, আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে মানুষের মুখ এবং চোয়ালের গঠন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
নরম খাবার খাওয়া এবং মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কারণে এই সমস্যা বাড়ে। তাই, মুখের সঠিক গঠন বজায় রাখতে ‘মিউইং’ একটি কার্যকরী উপায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে ‘মিউইং’ দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বিশেষ করে ‘ইনসেল’ (involuntary celibate) সম্প্রদায়ের মধ্যে এর চর্চা বাড়ে, যারা নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে উদ্বিগ্ন।
টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে ‘মিউইং’ সম্পর্কিত ভিডিওগুলি কয়েক বিলিয়ন বার দেখা হয়েছে, যা এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
তবে, ‘মিউইং’ নিয়ে বিতর্কও কম নয়।
সমালোচকরা বলছেন, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
ব্রিটিশ অর্থোডন্টিক সোসাইটি (British Orthodontic Society) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, মুখের আকার পরিবর্তনের জন্য চোয়ালের ব্যায়াম বা জিহ্বার সঠিক অবস্থানে থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
তাছাড়া, মিউ-এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে রোগীদের ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ছিল, যার কারণে তাকে ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ড. মাইক মিউ-এর ধারণা অনুযায়ী, মুখের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্য অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তার মতে, মুখের গড়ন যদি সঠিক না হয়, তবে তা শরীরের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে।
তিনি মুখ ও চোয়ালের গঠনকে স্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত করেন।
যদিও এই দাবির স্বপক্ষে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
‘মিউইং’-এর ধারণা প্রচারের ক্ষেত্রে নৈতিক কিছু প্রশ্নও উঠেছে।
অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিজেদের চেহারা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা তৈরি হতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের মধ্যে শারীরিক সৌন্দর্যের চেয়ে জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ তৈরি করা।
ড. মাইক মিউ-এর এই বিতর্কিত পদ্ধতির ভবিষ্যৎ কী, তা সময়ই বলবে।
তবে, বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ ছাড়া কোনো পদ্ধতির অনুসরণ করা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তথ্যসূত্র: The Guardian